নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা ক্যাব আসলে কী?
ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।
কেন ক্যাব প্রসঙ্গে বারবার উঠছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির কথা?
নেহরু-লিয়াকত চুক্তি দিল্লি চুক্তি নামেও পরিচিত। দুই দেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কীরকম আচরণ করা হবে তার পরিকাঠামোর কথা ছিল এই চুক্তিতে।
সংসদে ক্যাব বিতর্কে বারবার উঠে এসেছে নেহরু-লিয়াকত চুক্তির কথা। ১৯৫০ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল দিল্লিতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, ওই চুক্তি অনুসারে ভারত সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিলেও পাকিস্তান তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ভুলের সংশোধন হবে ক্যাবের মাধ্যমে।
ভারত সরকার ও পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার সম্পর্কিত এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ১৯৫০ সালের ৮ এপ্রিল। সে সময়ে জওহরলাল নেহরু ভারতের ও লিয়াকত আলি খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
নেহরু-লিয়াকত চুক্তি কেন স্বাক্ষরিত হয়েছিল?
দেশভাগের পর সংখ্যালঘুদের অবস্থা এবং প্রভূত পরিমাণ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিলক্ষিত করবার পর এই চুক্তির প্রয়োজন অনুভূত হয়। ১৯৫০ সালে ভারত ও পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)-এর ১০ লক্ষেরও বেশি হিন্দু ও মুসলমান উদ্বাস্তু হন। ১৯৫০ সালে পূর্ব পাকিস্তানে এবং নোয়াখালিতে ব্যাপক দাঙ্গার পরিপ্রেক্ষিতেই এই অবস্থা হয়েছিল।
ভারত ও পাকিস্তান কিসে সহমত হয়েছিল?
চুক্তির শুরুতেই বলা হয়েছে, “ভারত ও পাকিস্তানের সরকার উভয়েই নিজেদের এলাকায় সংখ্যালঘুদের ধর্ম নির্বিশেষে নাগরিকত্বে সমমর্যাদা, জীবন, সংস্কৃতি, সম্পত্তি এবং আইন মোতাবেক ব্যক্তিগত সম্মান ও নিজ দেশে চলাফেরা, পেশা, বক্তব্য ও অর্চনার স্বাধীনতা দিতে সম্মত হয়েছে।”
বলা হয়েছিল, “সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগুরুদের মতই দেশের সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন, রাজনৈতিক ও অন্যান্য পদে থাকতে পারবেন, এবং দেশের প্রশাসনিক ও সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করতে পারবেন। উভয় সরকারই এগুলিকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করছে এবং এগুলিকে কার্যকর করবে।”
* “দুই সরকারই নিজ নিজ দেশের প্রতি সংখ্যালঘুদের আনুগত্যের বিষয়টি জোর দিতে চায় এবং নিজ নিজ দেশের সরকার তাদের ক্ষোভের প্রতিকার করবে।”
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল কী?
এ বিলের উদ্দেশ্য ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরকিত্ব দেবার জন্যই এই বিল। অন্যভাবে বললে, ভারতের প্রতিবেশী মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলির অমুসলিম অভিবাসীদের সহজে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার জন্য এই বিলের অবতারণা।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য ১২ মাস টানা ভারতে থাকার নিয়মের সঙ্গে বিগত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর ভারতবাস জরুরি ছিল। এবারের সংশোধনীতে দ্বিতীয় অংশে পরিবর্তন ঘটানো হচ্ছে। উপরোক্ত দেশগুলি থেকে আনা নির্দিষ্ট ৬টি ধর্মাবলম্বীদের জন্য ১১ বছর সময়কালটিকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ৬ বছরে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের আওতায় ভারতে বসবাসকারী কোনও ব্যক্তি অথবা যাঁর বাবা মা ভারতীয়, অথবা যিনি ভারতে একটি নির্দিষ্ট সময়কাল জুড়ে বাস করে এসেছেন, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার যোগ্য।
বেআইনি অভিবাসীরা ভারতের নাগরিক হতে পারে না। এই আইনের আওতায়, ১) যদি পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়া কেউ দেশে প্রবেশ করে থাকেন অথবা ২) বৈধ নথি নিয়ে প্রবেশ করার পর নির্দিষ্ট সময়কালের বেশি এ দেশে বাস করে থাকেন, তাহলে তিনি বিদেশি অবৈধ অভিবাসী বলে গণ্য হবেন।
বিদেশি আইন ১৯৪৬ এবং পাসপোর্ট আইন, ১৯২০ মোতাবেক অবৈধ অভিবাসীকে জেলে পাঠানো বা প্রত্যর্পণ করা হয়ে থাকে।
২০১৫ ও ২০১৬ সালে সরকার ১৯৪৬ ও ১৯২০ সালের আইনানুসারে অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রে কিছু গোষ্ঠীকে ছাড় দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও তার আগে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ভারতে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টানদের ছাড় দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ অবৈধ অভিবাসীদের ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলির সদস্যরা বৈধ কাগজপত্র ছাড়া ভারতে বাস করলেও তাঁদের জেলে বা নিজেদের দেশে পাঠানো হবে না।
২০১৬ সালের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল সংসদে আনা হয়েছে যাতে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে এই ব্যক্তিদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া যায়।
নাগরিকত্বের স্বাভাবিক যোগ্যতা
মূল নাগরিকত্ব আইনে কোনও ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারতেন, যদি তিনি ভারতের বাসিন্দা হতেন বা গত ১২ মাস ধরে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করতেন এবং গত ১৪ বছর সময়কালের মধ্যে অন্তত ১১ বছর ভারতে বাস করতেন।
লোকসভায় জানুয়ারি মাসে যে বিল পাশ হয়েছিল, তাতে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি, শিখ, খ্রিষ্টানদের এ ব্যাপারে সময়ের ছাড় দেওয়া হয়েছিস। এই গোষ্ঠীভুক্তদের ক্ষেত্রে ১১ বছর সময়কে কমিয়ে ৬ বছর করা হয়েছিল।
নয়া আইনে এই প্রক্রিয়ার সময়সীমা আরও কমানো হয়েছে। এই গোষ্ঠীভুক্তদের জন্য এবার আর ৬ বছর নয়, ৫ বছর সময়কাল ধার্য করা হয়েছে বলে PRS Legislative
Research-এর বিশ্লেশণ জানিয়েছে।
বিল নিয়ে এ যাবৎ কী হয়েছে?
লোকসভায় এ বিল প্রথমবার পেশ হয় ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই। সে বছরের ১২ অগাস্ট বিল পাঠানো হয় যৌথ সংসদীয় কমিটিতে। কমিটি তার রিপোর্ট জমা দেয় ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি। পরের দিন, ২০১৯ সালের ৮ জানুয়ারি লোকসভায় সে বিল পাশ হয়।
ষোড়শ লোকসভা অধিবেশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়ে সরকার এ বিল রাজ্যসভায় আনার জন্য অতি তৎপর হয়ে ওঠে। উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে বিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখা দেওয়ায় সরকার সংযত হয় এবং ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি রাজ্যসভা সিনে ডাই হয়ে যায়। বিল আর পেশ করা হয়নি।
সংসদের কার্য প্রণালী অনুসারে লোকসভায় পাশ হওয়া বিল রাজ্য সভায় পেশ না হলে তামাদি হয়ে যায়। সে নিয়ম অনুসারে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলও তামাদি হয়ে যায়।
বিল নিয়ে বিতর্ক কেন?
এ বিল নিয়ে প্রধান আপত্তির বিষয় হল এখানে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করা হয়েছে। সমালোচকরা বলছেন, সংবিধানের ১৪ নং অনুচ্ছেদে যে সমতার অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে, এ বিল তার পরিপন্থী।
তবে সরকারের বক্তব্য, মুসলিম প্রধান বিদেশে যেসব সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীরা ধর্মীয় কারণে হিংসার শিকার হন তাঁদের নাগরিকত্বদানই এ বিলের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ বিজেপি নেতারা বলে চলেছেন, দেশভাগের ফলে যাঁরা অসহায় হয়ে পড়েছিলেন, “মা ভারতী”র সেই সব পুত্র কন্যাদের আশ্রয়দানের মাধ্যমে ইতিহাসের ভুলকে সংশোধন করাই বিলের লক্ষ্য।
উত্তর পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিকে এ বিলের ফলে বহুসংখ্যক বেআইনি বাংলাদেশিরা নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন বলে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে পাল্টে যাবে জনবিন্যাসের ধরন, কাজের সুযোগ কমবে, এবং নিজস্ব সংস্কৃতির ক্ষয় হবে।
রাজ্যসভায় বিল পেশের আশঙ্কায় এ বছরের শুরুতে প্রায় পুরো উত্তরপূর্ব ভারত জুড়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাপক বিক্ষোভ সংঘটিত হয়।
তবে বিজেপি এ বিল পাশ করানোর ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
কোথায় কোথায়, কেন লাগু হবে না ক্যাব?
ক্যাব-এ বলা হয়েছে, এই ধারার কিছুই আসাম, মেঘালয়, মিজোরামের জনজাতি এলাকায় লাগু হবে না। লাগু হবে না ত্রিপুরাতেও।
সোমবার, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) লোকসভায় পাশ হয়ে গেল। এই বিলে অভিবাসীদের একাংশকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেবার ব্যাপারে কিছু ছাড়ের প্রস্তাব রয়েছে। ক্যাবের এই নতুন সংস্করণে কেন্দ্র উত্তরপূর্বাঞ্চলের কিছু অংশকে ছাড় দিয়েছে। এই জায়গাগুলিতে ক্যাবের বিরোধিতায় বিক্ষোভ হয়েছিল।
কার্যত এই বিল থেকে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামকে সম্পূর্ণ বাদ দেওয়া হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মেঘালয়ের পুরোটা, আসাম-ত্রিপুরার বিভিন্ন অংশ। কিন্তু মণিপুরেের পুরোটাই ক্যাবের আওতায় থাকছে। (তবে মণিপুরের জন্য সরকার বিশেষ কিছু প্রস্তাব ঘোষণা করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে)।
তিনটি রাজ্যকে পুরো বাদ দেওয়া হল কেন?
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব)-এ বলা হয়েছে, এই ধারার কিছুই আসাম, মেঘালয়, মিজোরামের জনজাতি এলাকায় লাগু হবে না। লাগু হবে না ত্রিপুরাতেও। কারণ সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিল অন্তর্ভুক্ত এলাকা এবং ১৮৭৩ সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশনের আওতায় ইন্টার লাইন নোটিফায়েড এলাকাগুলি পুরোটাই এই ক্যাবের আওতার বাইরে থাকবে। ইন্টার লাইন পারমিট (আইএলপি) লাগু রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ড ও মিজোরামে। নাগাল্যান্ডের ডিমাপুর শহর ইন্টার লাইন পারমিটের আওতাধীন নয়।
আইএলপি ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে?
আইএলপি এক বিশেষ ধরনের পারমিট বা অনুমতি। ভারতের অন্য যে কোনও জায়গার নাগরিকদের এই তিনটি রাজ্যে প্রবেশ করতে গেলে এই বিশেষ পারমিট লাগে। এর জন্য অনলাইনে আবেদনে করা যায়, আবেদন করা যায় শারীরিক ভাবে উপস্থিত হয়েও। ভ্রমণের তারিখ এবং ঠিক কোন কোন স্থানে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, জানাতে হয় তাও।
এই ছাড়ের ফলে কী হবে?
আইএলপি ভুক্ত রাজ্যগুলিতে, অন্য রাজ্য থেকে আসা বহু অভিবাসী ইতিমধ্যেই রয়েছেন। তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি পারমিট রয়েছে এবং সেগুলি রিনিউও করানো হয়। এখন প্রশ্ন হল, ক্যাবের আওতায় যাঁরা নাগরিক হবেন, তাঁরা কি এ রাজ্যগুলিতে অনয নাগরিকদের মতই আইএলপির জন্য আবেদন করতে পারবেন!
এ ছাড়াও বহিরাগতদের (অন্য রাজ্য বা অঞ্চলের ভারতীয় নাগরিক) ষষ্ঠ তফশিল বা ইনারলাইন ভুক্ত এলাকায় প্রচুর বিধিনিষেধ রয়েছে। এই নিয়মগুলির আওতাতেই ক্যাবের মাধ্যমে যাঁরা নাগরিক হয়ে উঠবেন তাঁদের উপরেও বিধিনিষেধ লাগু হবে বলে প্রত্যাশিত।
প্রভাবশালী সংগঠন ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডেন্ট বনলারাউতা বলছেন, “এই ছাড়ের মানে ক্যাবের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া কোনও বাংলাদেশি মিজোরামে বা অন্য কোনও আইএলপি ভুক্ত রাজ্যে বসবাস করতে পারবেন না। এটাই আমাদের দাবি ছিল।”
ষষ্ঠ তফশিল কী, ক্যাবের আওতায় কোন কোন এলাকা ষষ্ঠ তফশিল হিসেবে ছাড় পাচ্ছে?
সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামের স্বায়ত্তশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি)গুলিতে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে। জনজাতি এলাকার উন্নয়ন এবং জনজাতিদের স্বশাসনের উদ্যোগ বৃদ্ধির জন্য এই এলাকাগুলিতে এডিসি আইন প্রণয়ন করতে পারে।
মিজোরাম পুরোটাই আইএলপিভুক্ত। অন্য তিনটি রাজ্যের বেশ কিছু এলাকা ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত। জনজাতি অধ্যুষিত মেঘালয়ে তিনটি এডিসি রয়েছে, যার আওতায় চলে আসবে প্রায় পুরো রাজ্যই। শুধু শিলং শহরের একাংশ এর থেকে বাদ থাকবে। আসামে তিনটি ও ত্রিপুরায় একটি এডিসি রয়েছে।
তাহলে মণিপুর কেন এ দুয়ের কোনটার আওতাতেই এল না?
মণিপুর, ত্রিপুরার মতই রাজন্যশাসিত রাজ্য ছিল। তারা যখন ১৯৪৯ সালে ভারতীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়, (পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পায় ১৯৭২ সালে) তখন দুই রাজ্যকেই ষষ্ঠ তফশিলের বাইরে রাখা হয়েছিল বলে জানালেন জেএনইউয়ের স্কুল অফ সোশাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক এল লাম খান পিয়াং।
তিনি জানালেন, “এই ১৯৮৫ সালে ষষ্ঠ তফশিল ত্রিপুরার জনজাতি এলাকায় লাগু হয়। ত্রিপুরাকে তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করবার পর কেন্দ্র বলেছিল কিছুদিনের মধ্যে মণিপুরেও তফশিল লাগু হবে। কিন্তু সে আর হয়নি। তবে মণিপুর রাজ্য সরকার তিনবার ষষ্ঠ তফশিলের প্রস্তাব করেছে, কিন্তু সে নিয়ে খুব চাপাচাপি করেনি।”
মণিপুরের উপজাতি এলাকার কী হল?
মণিপুরকে ভৌগোলিক ভাবেই দু ভাগে ভাগ করা যায়। ইমফলসহ উপত্যকা এলাকায় ভৌগোলিক ভাবে রাজ্যের ১০ শতাংশ, কিন্তু সেখানে বাস করেন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ। এঁরা মূলত মেইতেই সম্প্রদায়ের। বাকি ৯০ শতাংশ পাহাড়ি এলাকায় বাস করেন ৪০ শতাংশ নাগরিক। এঁদের একটা বড় অংশ জনজাতি সম্প্রদায়ের, যাঁদের মধ্যে রয়েছেন নাগা ও কুকিরা।
পিয়াং বললেন, “কেন্দ্র রাজ্যের স্বীকৃতি দিলেও জনজাতিদের নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এ কথা জানত, সে কারণে তারা ৩৭১ সি অনুচ্ছেদ প্রবর্তন করে।”
৩৭১ সি আবার কী?
এর অর্থ মণিপুরের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা। রাষ্ট্রপতি চাইলে মণিপুরের পার্বত্য এলাকার বিধায়কদের নিয়ে কোনও কমিটি গঠন করতে পারেন। সরকারের কাজকর্মে রদবদল ঘটাতে এবং রাজ্যের বিধানসভা কার্যবিধির জন্য আইন তৈরি করতে পারেন। ওই কমিটি যাতে ঠিকভাবে কাজ করতে পারে সে কারণে রাজ্যপালকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।
এ ছাড়াও, রাজ্যপাল বার্ষিকভাবে বা যখনই রাষ্ট্রপতি চাইবেন, তখনই মণিপুর রাজ্যের পার্বত্য এলাকার প্রশাসন নিয়ে রিপোর্ট দেবেন। ওই এলাকাগুলির প্রশাসনের বিষয়ে যে কোনও রকম নির্দেশ রাজ্য সরকারে দিতে পারে কেন্দ্র।
পিয়াং বলছেন, এই বিধি অনুসারে মণিপুরের জনজাতিদের বিধানসভায় সুরক্ষাকবচ দেওয়া হল।
মণিপুরে অন্য কোনও ব্যবস্থাও কি রয়েছে?
মণিপুর (পার্বত্য এলাকা) জেলা পরিষদ আইন, ১৯৭১ সংসদে পাশ হবার পর ১৯৭২ সালে ৬টি এডিসি তৈরির রাস্তা ১৯৭২ সালে পাকা হয়ে গিয়েছিল। পিয়াং বলছেন, ষষ্ঠ তফশিল ছাড়া এই কাউন্সিলগুলির ক্ষমতা তফশিলভুক্ত এডিসিগুলির তুলনায় অনেকটাই কম।
গত বছর বিধানসভায় মণিপুর জনসাধারণ বিল পাশ হয়। এই বিলে বহিরাগত ও অমণিপুরী জনতার জন্য বেশ কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে। বিলে মণিপুরী জনসাধারণ বলতে কী বোঝানো হয়, তার সংজ্ঞা স্থির করার জন্য প্রচুর আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত ১৯৫১ সালেকে কাট অফ বছর স্থির করা হয়।
উত্তর পূর্বের অন্য রাজ্যগুলির কী অবস্থা?
এ বছরের নভেম্বর মাসে, মেঘালয় মন্ত্রিসভা ২০১৬ সালে মেঘালয় রেসিডেন্টস সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাক্টের সংশোধনী মঞ্জুর করে। এর জেরে মেঘালয়ের বাসিন্দা নন এমন যে কাউকে এ রাজ্যে আসতে গেলে নিজেদের নথিভুক্ত করতে হবে। আইএলপি ঘরানার ব্যবস্থা লাগু করার দাবিতে এবং নাগরিক সমাজ ও রাজনৈতিক নেতাদের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ। উদ্বিগ্নদের তালিকায় ছিল মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার নামও। এঁদের আশঙ্কা আসাম এনআরসসি-তে ঠাঁই না-পাওয়া মানুষ দলে দলে মেঘালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করতে পারেন।
আসামের কিছু অংশেও আইএলপি অন্তর্ভুক্ত করবার প্রস্তাব এসেছে। অসম জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ সারা রাজ্যে আইএলপি লাগু করার দাবি তুলেছে।
এনপিআর কী, এ নিয়ে এত বিতর্ক কেন?
আসাম এনআরসি-তে ২০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে এনপিআর চালু হচ্ছে। সরকার বলছে সারা দেশে এনআরসি লাগু হবে। এর ফলেই এ দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এনপিআর।
আসাম এনআরসি-তে ৩.৩ কোটি আবেদনকারীর মধ্যে ১৯ লক্ষের নাম বাদ যাবার পরিপ্রেক্ষিতে উঠে এসেছে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর)-এর কথা। যা দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি করেছে।
এর আগে আধার কার্ডের তথ্য সংগ্রহ নিয়ে নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকারের বিতর্ক সামনে এসেছিল। এনপিআরের ক্ষেত্রে ভারতের বাসিন্দাদের আরও বেশি তথ্য সংগ্রহ করা হবে। এসব নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, তার মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক দেশ, এক কার্জের কথা তুলে দিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন, সারা দেশে এনআরসি কার্যকর হবে।
এনপিআর কী?
এনপিআর হল দেশের সাধারণ বাসিন্দাদের এক তালিকা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বক্তব্য অনুযায়ী, যাঁরা অন্তত গত ৬ মাস ধরে একটি এলাকায় থাকছেন, বা পরবর্তী ৬ মাস ধরে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় থাকার পরিকল্পনা করছেন তাঁরাই দেশের সাধারণ বাসিন্দা। এনআরসি-তে যেমন নাগরিকত্বের বিষয় রয়েছে, এনপিআর তেমন কিছু নয়। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কোনও ভিনদেশি কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বসবাস করলে তাঁর নামও এ তালিকায় নথিভু্ক্ত হবে।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন ও ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব (নাগরিকের নথিভুক্তিকরণ ও জাতীয় আইডেন্টিটি কার্ড) বিধি অনুসারে এনপিআর তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের প্রত্যেক স্বাভাবিক বাসিন্দার এনপিআরে নাম নথিভুক্তিকরণ বাধ্যতামূলক।
২০২১ সালের জনগণনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর এই কাজ চালাবে। আসামে যেহেতু সদ্য এনআরসি-র কাজ শেষ হয়েছে, সেখানে এনপিআর হবে না।
এনপিআর প্রক্রিয়া চলবে স্থানীয়, উপজেলা, জেলা, রাজ্য ও জাতীয় স্তরে। রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর ইতিমধ্যেই এখটি পাইলট প্রকল্প চালুও করে দিয়েছে। ১২০০ জেসা ও ৪০টি ছোট বড় শহরের বাসিন্দাদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে এই শুমারি চূড়ান্ত পর্যায়ে শুরু হবে, শেষ হবে ২০২০-র সেপ্টেম্বরে।
এ নিয়ে এত বিতর্কের কী আছে?
আসাম এনআরসি-তে ২০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার প্রেক্ষাপটে এনপিআর চালু হচ্ছে। সরকার বলছে সারা দেশে এনআরসি লাগু হবে। এর ফলেই এ দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এনপিআর। আধার এবং গোপনীয়তা নিয়ে চলমান বিতর্কের মাঝেই এনপিআরে ভারতের বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত তথ্য আরও অনেক বেশি পরিমাণে সংগ্রহ করা হতে চলেছে।
জাতীয় স্তরে এনআরসি কার্যকর করার ভাবনা প্রয়োগ করা করতে গেলে তার ভিত্তি হবে এই এনপিআর-ই। বাসিন্দাদের তালিকা প্রস্তুত হয়ে গেলে জাতীয় স্তরে এনআরসি তৈরি করা সম্ভব হবে এই তালিকা থেকে নাগরিক যাচাই করার মাধ্যমে।
আধার, ভোটার কার্ড, পাসপোর্ট এবং অমিত শাহ যে এক কার্ডের তত্ত্ব দিয়েছেন, সে সবের তথ্যসম্ভারও হয়ে উঠবে এই এনপিআর। মঙ্গলবার অমিস শাহ এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, “এই আলাদা আলাদা পদ্ধতির ব্যবস্থাপনা আমাদের বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, যদি আমরা জনগণনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে করি, তাহলে সব কার্ডই এক কার্ডের মধ্যে চলে আসবে। সরকার এ ব্যাপারে কোনও পরিকল্পনা এখনও করেনি, কিন্তু সফল ডিজিটাল জনগণনা মানুষের উপকারে আসবে এই সম্ভাবনার কথা আমিবলতে চাই।”
এনপিআর কি নতুন ধারণা?
না। ইউপিএ সরকারের আমলে যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পি চিদাম্বরম, সেই ২০০৯ সালে এই ধারণার কথা ওঠে। সে সময়ে মনে করা হয়েছিল, এই প্রকল্পের চেয়ে আধার কার্ড বেশি কাজে আসবে।
এনপিআরের তথ্য প্রথম সংগ্রহ করা হয় ২০১০ সালে, ২০১১-র জনগণনার জন্য। ২০১৫ সালে বাড়ি বাড়ি ঘুরে সার্ভের মাধ্যমে সে তথ্য আরও আপডেট করা হয়।
তবে বর্তমান সরকার ২০১৬ সালে সরকারি সুযোগসুবিধাদানের ব্যাপারে আধারকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। ৩ অগাস্টের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে অবশ্য ভারতের রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর এনপিআরের ভাবনাকে ফের সামনে নিয়ে এসেছে। ২০১৫ সালের এনপিআর নতুন তথ্যের মাধ্যমে আপডেট করার কাজ শুরু হয়েছে যা ২০২০-র মধ্যে সম্পন্ন হবে। আপডেট করা তথ্য ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
এনপিআর কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে?
জনবিন্যাসের তথ্য এবং বায়োমেট্রিক তথ্য দুইই সংগ্রহ করবে এনপিআর। জনবিন্যাসের তথ্যের ১৫টি বিভাগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নাম, জন্মস্থান, শিক্ষা ও পেশা যা রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর সংগ্রহ করবে। বায়োমেট্রিক তথ্যের জন্য নির্ভর করা হবে আধারের উপর। সে জন্য বাসিন্দাদের আধার তথ্য চাওয়া হবে।
এ ছাড়া পরীক্ষামূলকভাবে মোবাইল নম্বর, আধার, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি কার্চ এবং পাসপোর্ট (ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে) চাইছে রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর। জন্ম ও মৃত্যুর শংসাপত্র রেজিস্ট্রেশন আপডেট করার কাজও চলছে।
২০১০ সালে, রেজিস্ট্রার জেনারেলের দফতর কেবলমাত্র জনবিন্যাসের তথ্য সংগ্রহ করেছিল। ২০১৫ সালে তা আপডেট করা হয় মোবাইল নম্বর, আধার ও রেশন কার্ডের নম্বরের মাধ্যমে। ২০২০ সালে রেশন কার্ডের তথ্য বাদ দেওয়া হবে, কিন্তু আরও তথ্য যোগ করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে এনপিআরে নথিভুক্ত করা বাধ্যতামূলক, তবে প্যান, আধার, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ভোটার আইডি দেওয়া স্বেচ্ছামূলক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “এসব বাধ্যতামূলক করা মানেই অকারণে আইনি ঝামেলা ডেকে আনা। এখনও পর্যন্ত এগুলিকে বাধ্যতামূলক করার কোনও প্রস্তাব নেই। আমরাও নাগরিকদের উপর আস্থা রাখছি। যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছে তা যাচাই করার জন্য কোনও নথি চাওয়া হচ্ছে না। পাইলট প্রকল্পে আমরা দেখেছি মানুষ স্বেচ্ছায় তথ্য দিচ্ছেন। দিল্লির মত কিছু শহর এলাকায়ই কেবলমাত্র আমরা কিছুটা প্রতিরোধের মুখে পড়েছি।”
বাসিন্দারা যাতে অনলাইনে এনপিআর আপডেট করতে পারেন, সে ব্যবস্থাও রেখেছে মন্ত্রক।
সরকার এত তথ্য চাইছে কেন?
গোপনীয়তা নিয়ে প্রভূত সংশয়ের মধ্যে সরকারের এত তথ্য সংগ্রহের দু ধরনের কারণ রয়েছে। প্রথমত সরকার বলছে, সব দেশের কাছেই তার বাসিন্দাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য থাকা প্রয়োজন কারণ ার ফলে সরকার আরও ভালভাবে নীতিনির্ধারণ করতে পারবে এবং জাতীয় নিরাপত্তাকেও সাহায্য করবে।
দ্বিতীয়ত, সরকারের বক্তব্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার আইডি এবং প্যানের মত তথ্য থাকলে যাঁরা ভারতে বাস করছেন, তাঁদের লাল ফিতের ফাঁস এড়ানো সহজতর হবে। এর ফলে কাগজেকলমের কাজ কমবে বলেও মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের আধিকারিক বলছেন, সরকারি নথির এক এক জায়গায় কোনও নাগরিকে এক একটি জন্মতারিখ রয়েছে, এবং এ সমস্যা বহুল। এনপিআর এ সমস্যাকে দূর করবে। এনপিআরের তথ্য থাকলে সরকারি কাজে কাউকে আর আলাদা করে বয়স, তারিখ, ঠিকানা এবং অন্যান্য সব খুঁটিনাটি সংক্রান্ত প্রমাণপত্র দিতে হবে না। সরকার বলছে, এর ফলে ভোটার লিস্টে কারচুপিও এড়ানো যাবে।
আধিকারিকরা আরও জানাচ্ছেন এনপিআরের তথ্য গোপন রাখা হবে, অর্থাৎ কোনও তৃতীয় পক্ষের কাছে তা দেওয়া হবে না। তবে এত ব্যাপক তথ্য সংরক্ষণের উপায় কী তা অবশ্য পরিষ্কার নয়।
ক্যাব বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল কেন?
রায়গঞ্জে অমিত শাহ অনুপ্রবেশকারীদের "উইপোকা" বলে উল্লেখ করেন, মালদায় তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল "বাংলা তথা সারা দেশকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে রক্ষা" করা।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (ক্যাব) নিয়ে উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি ফুটছে। কিন্তু এনআরসির মাধ্যমে বিদেশি অভিবাসী চিহ্নিত করার জন্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে যে কড়া চৌকাঠ পেরোতে হবে, তার নাম পশ্চিমবঙ্গ।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট। সে কথা মাথায় রেখেই সোমবার লোকসভায় এ বিল নিয়ে কথা বলবার জন্য রাজ্যের পাঁচজন সাংসদের উপর দায়িত্ব দিয়েছিল বিজেপি। এঁরা হলেন, বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, মহিলা মোর্চার প্রধান লকেট চট্টোপাধ্যায়, দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্ত, মতুয়া নেতা শান্তনু ঠাকুর এবং লোকসভা ভোটের ঠিক আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে আসা সৌমিত্র খান। বিজেপির তরফ থেকে সোমবার সংসদে যাঁরা বলেছেন সেই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে, বিলের সপক্ষে আর কোনও রাজ্য থেকে এতজনকে বলতে দেওয়া হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটা বড় ইস্যু হয়ে ছিলেন ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা প্রায় এক কোটি উদ্বাস্তু মানুষ। সে ইস্যু ফের সামনে এসেছে। এর আগে কংগ্রেস ও তৃণমূল উভয়পক্ষই ভোটব্যাঙ্কের জন্য উদ্বাস্তুদের প্রশ্রয় দেবার অভিযোগ করে এসেছে সিপিএম নেতৃত্বাধীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে। এখন পাশার দান উল্টে গিয়েছে। বিজেপি এখন একই অভিযোগ আনছে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
সোমবার লোকসভায় ক্যাব পেশ করবার সময়ে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, “এ বিতর্ক যাঁরা দেখছেন, তাঁদের অনেকেই আশা করছেন যে আপনারা ওঁদের নাগরিকত্ব সমর্থন করবেন।”
ঘটনাক্রমে, ১ অক্টোবর অমিত শাহ কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এনআরসি তালিকাছুটদের সুরক্ষাকবচ হিসেবে প্রথমবার ক্যাবের উল্লেখ করেন। আসামের এনআরসি তালিকাছুটদের মধ্যে হিন্দুর সংখ্যা মুসলিমদের চেয়ে বেশি, এ কথা জানবার পর রাজ্য বিজেপিতে যে শঙ্কার আবহ তৈরি হয়েছিল, তা দূর করতেই বাংলায় এসে অমিত শাহের এ হেন বরাভয়।
লোকসভায় অমিত শাহ আরও একটি বিষয়ে জোর দিয়েছেন। ভারতে যেসব শরণার্থীরা কর্মরত তাঁরাও ক্যাবের মাধ্যমে সুরক্ষাকবচ পাবেন বলেন উল্লেখ করেছেন তিনি। “বাংলা এবং উত্তরপূর্বের শরণার্থীদের কাছে একটা স্পষ্ট বার্তা পৌঁছন প্রয়োজন। আপনারা যেদিন ভারতে এসেছেন, সেদিন থেকেই আপনারা নাগরিক হিসেবে গণ্য হবেন।”
তৃণমূলের রাজ্যসভার চিফ হুইপ সুখেন্দু শেখর রায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, “পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু আগমন দীর্ঘদিনের একটি ইস্যু। সমস্যা হল, বাংলাদেশ তৈরি হয়েছে ভাষার ভিত্তিতে। যাঁরা ওপার থেকে এসেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ ধর্মীয় অত্যাচারের আশঙ্কায় নয়, এসেছেন উর্দুভাষীদের হাতে ভাষাগত অত্যাচারের আশঙ্কায়।”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগে থেকেই এ বিষয়ে তৎপর হয়েছেন। তিনি বলেই দিয়েছেন রাজ্যে ক্যাব প্রযুক্ত হবে না। নাগরিকত্ব বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান। মমতারা বলেই দিয়েছেন, ক্যাবকে এনআরসি থেকে আলাদা করা যাবে না, কারণ ক্যাবের লক্ষ্য এনআরসিছুটদের রক্ষাকবচ দেওয়া।
মে মাসে বিজেপি ৪২টার মধ্যে এ রাজ্য থেকে ১৮টি লোকসভা আসনে জিতেছে। এ বারের লোকসভা নির্বাচনে তাদের মূল বক্তব্য ছিল অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে তাড়ানো। এই টার্গেট আসলে সীমান্তের ওপার থেকে আসা মুসলিমরা, যারা এখন তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক।
কিন্তু নভেম্বরে বিজেপি তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনেই হেরে গিয়েছে রাজ্যে। তার মধ্যে এমন আসনেও তৃণমূল জিতেছে, যেখানে আগে তারা কখনও জেতেনি। দুই দলই বলেছে, ভোটের এই ফল অমিত শাহের দেশব্যাপী এনআরসি লাগু করার প্রস্তাবের জের।
উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলি ছাড়া, কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই লোকসভা ভোটের সময়ে এনআরসি নিয়ে বাগবিতণ্ডা চরমে ওঠে। রায়গঞ্জে অমিত শাহ অনুপ্রবেশকারীদের “উইপোকা” বলে উল্লেখ করেন, মালদায় তাঁর প্রতিশ্রুতি ছিল “বাংলা তথা সারা দেশকে অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে রক্ষা” করা।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অমিত শাহ বলেছিলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন লক্ষ লক্ষ হিন্দু উদ্বাস্তুকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হবে। আমি আমার শরণার্থী ভাইদের আশ্বাস দিতে চাই… আমি সমস্ত হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, এবং খ্রিষ্টানদের আশ্বাস দিতে চাই যে আপনাদের ভারতছাড়া হতে হবে না। এনআরসি-র আগে আমরা নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল আনব, যার মাধ্যমে এই সব মানুষেরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবেন। ওঁরা ভারতীয় নাগরিকদের সমস্ত অধিকার ভোগ করবেন।”
সোমবার লোকসভায় বিতর্কের জবাব দেবার সময়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, দেশ ব্যাপী এনআরসি তাঁদের লক্ষ্য। মাত্র এক বছর আগে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং লোকসভায় বলেছিলেন, “বর্তমানে আসাম ছাড়া দেশের অন্য কোনও জায়গায় এনআরসি চালু করবার কোনও প্রস্তাব নেই।”
নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2019
· উপস্থাপিত
লোকসভা
ডিসেম্বর 09,
2019
· গৃহীত
লোকসভা
ডিসেম্বর 09,
2019
· গৃহীত
রাজ্যসভা
11 ডিসেম্বর,
2019
·
·
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ কারা ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে এবং কী কারণে নিয়ন্ত্রিত করে। কোনও ব্যক্তি ভারতীয় নাগরিক হয়ে উঠতে পারে যদি তারা ভারতে জন্মগ্রহণ করে বা ভারতীয় পিতৃ-মাতৃভূমি থাকে বা কিছু সময়ের জন্য দেশে বসবাস করে থাকে, তবে, অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসী বিদেশী যিনি: (i) পাসপোর্ট এবং ভিসার মতো বৈধ ভ্রমণের দলিল ছাড়াই দেশে প্রবেশ করেন, বা (ii) বৈধ কাগজপত্র সহ প্রবেশ করেন তবে অনুমতিপ্রাপ্ত সময়সীমার বাইরে থাকেন। [1]
অবৈধ অভিবাসীরা বিদেশি আইন, ১৯৪6 এবং পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯০২ এর অধীনে কারাবন্দি বা নির্বাসিত হতে পারে। ১৯৪6 এবং ১৯০৯ সালের আইনগুলি কেন্দ্রীয় সরকারকে ভারতে বিদেশিদের প্রবেশ, প্রস্থান এবং আবাসকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়। ২০১৫ এবং ২০১ 2016 সালে কেন্দ্রীয় সরকার অবৈধ অভিবাসীদের কয়েকটি দলকে ১৯৪6 এবং 1920 সালের আইনের বিধান থেকে অব্যাহতি দিয়ে দুটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। [২] এই গ্রুপগুলি হ'ল হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের খ্রিস্টানরা, যারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ বা তার আগে ভারতে এসেছিল। ২ এর থেকে বোঝা যায় যে অবৈধ অভিবাসীদের এই দলগুলিকে নির্বাসন দেওয়া হবে না বা বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে থাকার কারণে কারাবন্দি।
২০১ 2016 সালে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ সংশোধন করার জন্য একটি বিল প্রবর্তিত হয়েছিল। [৩] এই বিলে এই ছয়টি ধর্ম এবং তিনটি দেশের অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্বের জন্য যোগ্য করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল এবং ভারতের বিদেশী নাগরিকদের নিবন্ধকরণ সংক্রান্ত বিধানগুলিতে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছিল (ওসিআই) কার্ডধারীরা। এটি একটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল , যেটি January জানুয়ারী, ২০১২ এ তার প্রতিবেদন জমা দেয়। [৪] ৮ ই জানুয়ারী, ২০১৮ এ লোকসভা দ্বারা বিলটি পাস হয়েছিল। [৫] তবে, এটি 16 তম লোকসভা ভেঙে যায়নি । এরপরে, নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2019 ডিসেম্বর 2019 এ লোকসভায় চালু হচ্ছে।
২০১৯ বিলে অবৈধ অভিবাসীরা যারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং খ্রিস্টান, নাগরিকত্বের যোগ্য হওয়ার জন্য চেষ্টা করেছে। এটি উত্তর-পূর্বের কয়েকটি অঞ্চলকে এই বিধান থেকে ছাড় দেয়। বিলটিতে ওসিআই কার্ডধারীদের সম্পর্কিত বিধানগুলির সংশোধনীও করা হয়েছে। কোনও বিদেশী ১৯৫৫ সালের আইনে ওসিআই হিসাবে নিবন্ধন করতে পারেন যদি তারা ভারতীয় বংশোদ্ভূত হয় (যেমন, ভারতের প্রাক্তন নাগরিক বা তাদের বংশধর) বা ভারতীয় বংশোদ্ভূত কোনও ব্যক্তির স্ত্রী। এটি তাদের ভারতে ভ্রমণ করার অধিকার এবং দেশে কাজ এবং পড়াশোনার অধিকারের মতো সুবিধাগুলির অধিকারী হবে। ওই ব্যক্তি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অবহিত কোনও আইন লঙ্ঘন করলে ওসিআই নিবন্ধন বাতিল করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই আইনে আইনটি সংশোধন করেছে।
নীচে সারণি 1 ২০১ 2016 বিলের বিধানগুলির সাথে তুলনামূলকভাবে ২০১ Lok বিলের (লোকসভা দ্বারা পাস করা হয়েছে) তুলনা করেছে।
নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2019 এর সাথে লোকসভা দ্বারা পাস করা নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2016 এর তুলনা
নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১ ((লোকসভা দ্বারা পাস হিসাবে)
|
নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল 2019
|
কিছু অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্বের যোগ্যতা : এই আইনে অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অবৈধ অভিবাসীরা হলেন বিদেশী যারা বৈধ পাসপোর্ট বা ভ্রমণের দলিল ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেন বা অনুমতিপ্রাপ্ত সময়ের বাইরে থাকেন।
আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং খ্রিস্টানদের অবৈধ অভিবাসী হিসাবে গণ্য করা হবে না এই বিধানে এই আইনের সংশোধন করা হয়েছিল। এই সুবিধা পেতে, তাদের অবশ্যই বিদেশী আইন, ১৯৪6 এবং কেন্দ্রীয় সরকার পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯০৫ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। ১৯২০ আইনটি বিদেশীদের পাসপোর্ট বহন করার আদেশ দেয়, ১৯৯ the আইনটি ভারতে বিদেশীদের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করে।
বিলটি কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে আরও বলা হয়েছে, এই জাতীয় অবৈধ অভিবাসীর বিরুদ্ধে বিচারাধীন সমস্ত আইনী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
|
এই বিলে তিনটি দেশ থেকে আসা এই ধর্মাবলম্বী অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব সম্পর্কিত দুটি অতিরিক্ত বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব অর্জনের ফলাফল : বিলে বলা হয়েছে যে নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে: (i) এই জাতীয় ব্যক্তিদের ভারতে প্রবেশের তারিখ থেকে ভারতের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে, এবং (ii) তাদের অবৈধ অভিবাসনের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সমস্ত আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বা নাগরিকত্ব বন্ধ করা হবে।
ব্যতিক্রম : আরও, বিলে যোগ করা হয়েছে যে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম বা ত্রিপুরার উপজাতি অঞ্চলগুলিতে অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব সম্পর্কিত বিধান প্রযোজ্য হবে না। এই উপজাতি অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে কার্বি অ্যাংলং (আসামে), গারো পাহাড় (মেঘালয়ের), চাকমা জেলা (মিজোরামে), এবং ত্রিপুরা উপজাতি অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত। এটি ১৮ Eastern73 সালের বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন এর আওতাধীন অঞ্চলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে না। অভ্যন্তরীণ লাইন পারমিট ভারতীয়দের অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ড ভ্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করে।
|
ন্যাচারালাইজেশন দ্বারা নাগরিকত্ব : আইনটি কোনও ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করে, যদি তাকে ন্যাচারালাইজেশন দ্বারা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার অনুমতি দেয়। অন্যতম যোগ্যতা হ'ল সেই ব্যক্তি অবশ্যই ভারতে অবস্থান করেছেন বা তিনি গত 12 মাস এবং পূর্ববর্তী 14 বছরের কমপক্ষে 11 বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ছিলেন।
বিলে এই যোগ্যতার বিষয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং খ্রিস্টানদের ব্যতিক্রম তৈরি হয়েছিল। এই গোষ্ঠীগুলির জন্য, 11 বছরের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে ছয় বছর করা হবে।
|
এই বিলে এই জাতীয় ব্যক্তির প্রাকৃতিককরণের সময়কাল ছয় বছর থেকে পাঁচ বছর কমিয়ে আনা হয়েছে।
|
ওসিআই নিবন্ধন বাতিল করার জন্য ভিত্তি: এই আইনে বিধান দেওয়া হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতারণার মাধ্যমে নিবন্ধকরণ, সংবিধানের প্রতি অসম্মতি প্রদর্শন, যুদ্ধের সময় শত্রুদের সাথে জড়িত থাকার, ভারতের সার্বভৌমত্বের স্বার্থে প্রয়োজনীয়তা, সুরক্ষা সহ পাঁচটি ভিত্তিতে ওসিআইয়ের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে রাষ্ট্র বা জনস্বার্থ, বা নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মধ্যে ওসিআইকে দুই বছর বা তার বেশি কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। বিলটি নিবন্ধকরণ বাতিল করার জন্য আরও একটি ভিত্তি যুক্ত করেছে, অর্থাৎ ওসিআই যদি দেশে কার্যকর আইন প্রয়োগ করে তবে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে।
লোকসভায় বিলটি পাস হওয়ার পরে, নাগরিকত্ব আইন লঙ্ঘন বা কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক অবহিত অন্য কোনও আইন অযোগ্যতার সীমাবদ্ধ করার জন্য এটি সংশোধন করা হয়েছিল। এছাড়াও, কার্ডধারাকে শোনার সুযোগ দিতে হবে।
|
লোকসভা দ্বারা গৃহীত 2016 বিল হিসাবে একই।
|
সূত্র: নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৯ লোকসভা দ্বারা পাস হয়েছে; নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2019; পিআরএস।
বিবেচনা করার বিষয়গুলি
ধর্মের ভিত্তিতে পার্থক্য করা 14 অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন কিনা
এই বিলে বিধান করা হয়েছে যে চারটি শর্ত পূরণকারী অবৈধ অভিবাসীদের এই আইনের আওতায় অবৈধ অভিবাসী হিসাবে গণ্য করা হবে না। শর্তগুলি হ'ল: (ক) তারা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি বা খ্রিস্টান; (খ) তারা আফগানিস্তান, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের; (গ) তারা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪ বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছিল; (ঘ) তারা সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম, বা ত্রিপুরার কিছু উপজাতি অঞ্চল বা "অভ্যন্তরীণ রেখা" পারমিটের অধীনে, অর্থাৎ, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডে নেই .
১৪ অনুচ্ছেদে নাগরিক এবং বিদেশী সকল ব্যক্তির সমতার গ্যারান্টি রয়েছে। এটি কেবলমাত্র আইনগুলির লোকদের মধ্যে পার্থক্য করার অনুমতি দেয় যদি এটি করার যৌক্তিকতা যুক্তিসঙ্গত উদ্দেশ্যে কাজ করে। [6] প্রশ্নটি হচ্ছে যে এই বিধানটি সংবিধানের ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে সাম্যের অধিকার লঙ্ঘন করেছে কেননা এটি অবৈধ অভিবাসীদের তাদের আদি দেশ, (খ) ধর্ম, (গ) তারিখের ভিত্তিতে অবৈধ অভিবাসীদের বৈষম্যমূলক আচরণ প্রদান করে? ভারতে প্রবেশ, এবং (ঘ) ভারতে বসবাসের স্থান। আমরা নীচে পরীক্ষা করে দেখি যে এই বিভেদযুক্ত উপাদানগুলি একটি যুক্তিসঙ্গত উদ্দেশ্যে কাজ করতে পারে।
প্রথমত, বিলটি অভিবাসীদের তাদের মূল দেশটির ভিত্তিতে শ্রেণীবদ্ধ করে কেবল আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে। বিলে (ওএসআর) অবজেক্টস অ্যান্ড কারণগুলির বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাথে ভারতের historicতিহাসিক অভিবাসন হয়েছে এবং এই দেশগুলির একটি রাষ্ট্রীয় ধর্ম রয়েছে, যার ফলে সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর ধর্মীয় নিপীড়নের ফলস্বরূপ। এসওআর এর কারণ হিসাবে অবিভক্ত ভারতের লক্ষ লক্ষ নাগরিক পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বাস করছিলেন, আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তির ব্যাখ্যা দেওয়ার কোনও কারণ সরবরাহ করা হয়নি।
আরও, এটি পরিষ্কার নয় যে এই দেশগুলির অভিবাসীরা অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ যেমন শ্রীলঙ্কা (বৌদ্ধ রাষ্ট্র ধর্ম) [7] এবং মায়ানমার (বৌদ্ধ ধর্মের প্রাথমিকত্ব) [৮] থেকে আসা অভিবাসীদের থেকে কেন পার্থক্য করা হয় । তামিল আইলামস দেশে শ্রীলঙ্কার একটি ভাষাগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ইতিহাস রয়েছে। [9] একইভাবে, ভারত মিয়ানমারের সাথে একটি সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে, যার একটি ধর্মীয় সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গা মুসলমানদের অত্যাচারের ইতিহাস রয়েছে। [১০] কয়েক বছর ধরে, তামিল ইলাম এবং রোহিঙ্গা উভয় মুসলিমই নিজ নিজ দেশ থেকে নির্যাতন চালিয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার খবর পেয়েছে। [11] এই বিলের উদ্দেশ্য হ'ল ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা, এই দেশগুলির ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অবৈধ অভিবাসীদের কেন এই বিল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তা পরিষ্কার নয়।
দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের কয়েকটি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় নিগ্রহের উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাসের বিষয়ে, যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে এই দেশগুলিতে অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুও রয়েছে, যারা ধর্মীয় নিপীড়নের মুখোমুখি হন এবং তারা অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি জমান। উদাহরণস্বরূপ, কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে আহমদিয়া মুসলমানদের (যারা সেই দেশে অ-মুসলিম হিসাবে বিবেচিত) [১২] এবং বাংলাদেশে নাস্তিকদের হত্যার খবর পাওয়া গেছে। [১৩] কেবল ছয়টি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবৈধ অভিবাসীদের কেন এই বিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়।
তৃতীয়, অভিবাসীদের ভারতে প্রবেশের তারিখের ভিত্তিতে কেন তাদের বৈষম্যমূলক আচরণ করা হচ্ছে তা স্পষ্ট নয়, অর্থাৎ তারা ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ এর আগে বা পরে ভারতে প্রবেশ করেছিল কিনা।
চতুর্থত, বিলে ষষ্ঠ তফসিলের আওতাধীন অঞ্চলে, অর্থাৎ অসম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী অবৈধ অভিবাসীদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিল কার্যকর করার পেছনের উদ্দেশ্য ছিল স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিলের মাধ্যমে উপজাতি অঞ্চলগুলির উন্নয়নে সহায়তা করা, এই অঞ্চলগুলির আদিবাসী জনগণকে শোষণ থেকে রক্ষা করা এবং তাদের স্বতন্ত্র সামাজিক রীতিনীতি সংরক্ষণ করা। [14] বিলটিতে ইনার লাইন পারমিট অঞ্চলগুলিও বাদ দেওয়া হয়েছে। ইনার লাইন অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডে ভারতীয় নাগরিকসহ ব্যক্তিদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে। এই অঞ্চলগুলিতে বসবাসরত কোনও অবৈধ অভিবাসী নাগরিকত্ব অর্জন করার পরে, তিনি অন্যান্য ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, এই অঞ্চলে একই বিধিনিষেধের শিকার হন to সুতরাং, বিল কেন এই অঞ্চলগুলিতে বসবাসরত অবৈধ অভিবাসীদের বাদ দেয় তা স্পষ্ট নয়।
ওসিআই নিবন্ধন বাতিল করতে সরকারের কাছে বিস্তৃত বিচক্ষণতা
১৯৫৫ সালের আইন অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন কারণে ওসিআইগুলির নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। বিলে নিবন্ধন বাতিল করার জন্য আরও একটি ভিত্তি যুক্ত করা হয়েছে, অর্থাত্ ওসিআই যদি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কোনও আইন লঙ্ঘন করে। এতে আরও বলা হয়েছে যে কার্ডধারককে শোনার সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত ওসিআই বাতিল করার আদেশগুলি পাস করা উচিত নয়।
যুক্তিযুক্ত হতে পারে যে ওসিআই নিবন্ধন বাতিল হওয়ার ফলে লঙ্ঘনের ফলে আইনীদের তালিকা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ক্ষমতা দেওয়া আইনসভায় কর্তৃপক্ষের অত্যধিক ক্ষমতার প্রতিনিধি দলের পক্ষে হতে পারে। সুপ্রীম কোর্ট বলেছে যে কোনও নির্বাহী কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা অর্পণ করার সময় আইনসভায় তাদের নির্দেশিকার জন্য একটি নীতি, মান বা বিধি বিহিত করতে হবে, যা কর্তৃপক্ষের ক্ষমতাগুলির সীমাবদ্ধতা নির্ধারণ করবে এবং বিধিগুলি কীভাবে ফ্রেমবন্দ করতে হবে তা সিদ্ধান্ত নিতে তাদেরকে নির্বিচারে বিচক্ষণতা দেবে না । [15] এই বিলে কেন্দ্রীয় সরকার যে আইনগুলির বিজ্ঞপ্তি দিতে পারে তার আইন সম্পর্কে কোন নির্দেশনা সরবরাহ করে না। সুতরাং, সরকার কর্তৃক অবহিত হওয়া আইনের ধরণের মানদণ্ড, মানদণ্ড বা নীতিগুলির অভাবে, যুক্তি দেওয়া যেতে পারে যে কার্যনির্বাহীকে প্রদত্ত ক্ষমতা বৈধ প্রতিনিধি দলের অনুমোদিত সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
Bill Summary
The Citizenship (Amendment) Bill, 2019
The Citizenship (Amendment) Bill, 2019 was introduced in Lok
Sabha by the Minister of Home Affairs, Mr. Amit Shah, on December 9, 2019. The
Bill seeks to amend the Citizenship Act, 1955.
The Citizenship Act, 1955 provides various ways in which
citizenship may be acquired. It provides for citizenship by birth, descent,
registration, naturalisation and by incorporation of territory into India. In
addition, it regulates the registration of Overseas Citizen of India
Cardholders (OCIs), and their rights. An OCI is entitled to some benefits such
as a multiple-entry, multi-purpose lifelong visa to visit India.
Definition of illegal migrants: The Act prohibits illegal
migrants from acquiring Indian citizenship. It defines an illegal migrant as a
foreigner: (i) who enters India without a valid passport or travel documents,
or (ii) stays beyond the permitted time.
The Bill amends the Act to provide that that the Hindus,
Sikhs, Buddhists, Jains, Parsis and Christians from Afghanistan, Bangladesh and
Pakistan, who entered India on or before December 31, 2014, will not be treated
as illegal migrants. In order to get this benefit, they must have also been
exempted from the Foreigners Act, 1946 and the Passport (Entry into India) Act,
1920 by the central government. The 1920 Act mandates foreigners to carry
passport, while the1946 Act regulates the entry and departure of foreigners in
India.
Citizenship by registration or naturalisation: The Act
allows a person to apply for citizenship by registration or naturalisation, if
the person meets certain qualifications. For instance, if a person resides in
India for a year and if one of his parents is a former Indian citizen, he may
apply for citizenship by registration.
To obtain citizenship by naturalisation, one of the
qualifications is that the person must have resided in India or have been in
service of the central government for at least 11 years before applying for
citizenship.
The Bill creates an exception for Hindus, Sikhs, Buddhists,
Jains, Parsis and Christians from Afghanistan, Bangladesh and Pakistan, with
regard to this qualification. For these groups of persons, the 11 years’
requirement will be reduced to five years.
On acquiring citizenship: (i) such persons will be deemed to
be citizens of India from the date of their entry into India, and (ii) all
legal proceedings against them in respect of their illegal migration or
citizenship will be closed.
These provisions on citizenship for illegal migrants will
not apply to the tribal areas of Assam, Meghalaya, Mizoram, and Tripura,
included in the Sixth Schedule to the Constitution. These tribal areas include
Karbi Anglong (in Assam), Garo Hills (in Meghalaya), Chakma District (in
Mizoram), and Tripura Tribal Areas District. Further, it will not apply
to the “Inner Line” areas notified under the Bengal Eastern Frontier
Regulation, 1873. In these areas, visits by Indians are regulated through
the Inner Line Permit. Currently, this permit system is applicable to
Arunachal Pradesh, Mizoram, and Nagaland.
Cancellation of registration of OCIs: The Act provides that
the central government may cancel registration of OCIs on certain grounds.
These include: (i) if the OCI has registered through fraud, or (ii) if within
five years of registration, the OCI has been sentenced to imprisonment for two
years or more, or (iii) if it becomes necessary in the interest of sovereignty
and security of India. The Bill adds one more ground for cancelling
registration, that is, if the OCI has violated the provisions of the Act or of
any other law as notified by the central government. The orders for
cancellation of OCI should not be passed till the OCI cardholder is given an
opportunity to be heard.
বিল সংক্ষিপ্তসার
নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, 2019
নাগরিকত্ব (সংশোধন) বিল, ২০১৮ 9 ডিসেম্বর, 2019 এ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ লোকসভায় উপস্থাপন করেছিলেন , বিলে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ সংশোধন করার চেষ্টা করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫ বিভিন্ন পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব অর্জন করতে পারে। এটি জন্ম, বংশোদ্ভূত, নিবন্ধকরণ, প্রাকৃতিকীকরণ এবং ভারতে অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত করে নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করে। এছাড়াও, এটি বিদেশী নাগরিক অফ ইন্ডিয়া কার্ডধারীদের (ওসিআই) নিবন্ধকরণ এবং তাদের অধিকার নিয়ন্ত্রণ করে। একটি ওসিআই ভারত সফর করার জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি, বহু-উদ্দেশ্যমূলক আজীবন ভিসার মতো কিছু সুবিধাগুলির অধিকারী।
অবৈধ অভিবাসীদের সংজ্ঞা : এই আইনটি অবৈধ অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জন থেকে নিষেধ করেছে। এটি একটি অবৈধ অভিবাসীকে বিদেশী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করে: (i) যিনি বৈধ পাসপোর্ট বা ভ্রমণের দলিল ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেন, বা (ii) অনুমোদিত সময়ের বাইরে থাকেন।
বিলে এই আইনের সংশোধন করে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে যে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং খ্রিস্টানরা, যারা ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বা তার আগে ভারতে প্রবেশ করেছিল, তারা অবৈধ অভিবাসী হিসাবে বিবেচিত হবে না। এই সুবিধা পেতে, তাদের অবশ্যই বিদেশী আইন, ১৯৪6 এবং কেন্দ্রীয় সরকার পাসপোর্ট (ভারতে প্রবেশ) আইন, ১৯০৫ থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। ১৯২০ আইনটি বিদেশীদের পাসপোর্ট বহন করার আদেশ দেয়, ১৯৯ the আইনটি ভারতে বিদেশীদের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ করে।
নিবন্ধকরণ বা প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্ব : আইনটি কোনও ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট যোগ্যতা পূরণ করলে নিবন্ধকরণ বা প্রাকৃতিকীকরণের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে allows উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যক্তি ভারতে এক বছরের জন্য বসবাস করেন এবং তার বাবা-মা'র একজন যদি প্রাক্তন ভারতীয় নাগরিক হন তবে তিনি নিবন্ধের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন।
ন্যাচারালাইজেশনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য একটি যোগ্যতার মধ্যে অন্যতম হ'ল সেই ব্যক্তি অবশ্যই ভারতে অবস্থান করেছেন বা নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের আগে কমপক্ষে 11 বছর ধরে কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে ছিলেন।
এই যোগ্যতাটি নিয়ে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী এবং খ্রিস্টানদের জন্য এই বিল একটি ব্যতিক্রম তৈরি করেছে। এই গোষ্ঠীগুলির জন্য, 11 বছরের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হবে।
নাগরিকত্ব অর্জন করার ক্ষেত্রে: (i) এই ধরনের ব্যক্তিদের ভারতে প্রবেশের তারিখ থেকে ভারতের নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে, এবং (ii) তাদের অবৈধভাবে অভিবাসন বা নাগরিকত্বের বিষয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত আইনীকরণ বন্ধ থাকবে।
সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলের অন্তর্ভুক্ত আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম এবং ত্রিপুরার উপজাতি অঞ্চলগুলিতে অবৈধ অভিবাসীদের নাগরিকত্ব সম্পর্কিত এই বিধানগুলি প্রযোজ্য হবে না। এই উপজাতি অঞ্চলগুলির মধ্যে রয়েছে কার্বি অ্যাংলং (আসামে), গারো পাহাড় (মেঘালয়ের), চাকমা জেলা (মিজোরামে), এবং ত্রিপুরা উপজাতি অঞ্চলগুলি অন্তর্ভুক্ত। অধিকন্তু, এটি বেঙ্গল ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রেগুলেশন, 1873 এর অধীনে "ইনার লাইন" অঞ্চলগুলিতে প্রযোজ্য হবে না these এই অঞ্চলগুলিতে, ভারতীয়দের দর্শন অভ্যন্তরীণ লাইন পারমিটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। বর্তমানে, এই পারমিট সিস্টেমটি অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডে প্রযোজ্য।
ওসিআইগুলির নিবন্ধন বাতিল : এই আইনে বিধান দেওয়া হয়েছে যে কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট কারণে ওসিআইয়ের নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে: (i) ওসিআই জালিয়াতির মাধ্যমে নিবন্ধন করেছে, বা (ii) নিবন্ধনের পাঁচ বছরের মধ্যে, ওসিআইকে দুই বছরের বা তার বেশি কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে, বা (iii) স্বার্থে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠলে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং সুরক্ষা। বিলে নিবন্ধন বাতিল করার জন্য আরও একটি ভিত্তি যুক্ত করা হয়েছে, তা হল, ওসিআই যদি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আইন বা অন্য কোনও আইনের বিধান লঙ্ঘন করে। ওসিআই কার্ডধারককে শুনানির সুযোগ না দেওয়া পর্যন্ত ওসিআই বাতিলের আদেশগুলি পাস করা উচিত নয়।
· ওভারসিজ সিটিজেনশিপ অফ ইন্ডিয়া (ওসিআই) হ'ল একটি অভিবাসন অবস্থা যা ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশী নাগরিককে অনির্দিষ্টকালের
জন্য ভারতের প্রজাতন্ত্রে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেয়। ওসিআই প্রবর্তিত হয়েছিল ভারতীয় প্রবাসী দ্বারা বিশেষত উন্নত দেশগুলিতে দ্বৈত নাগরিকত্বের দাবিতে। এটি নাগরিকত্ব (সংশোধন) আইন, ২০০৫ দ্বারা আগস্ট ২০০৫ সালে প্রবর্তিত হয়েছিল। ২০০৫ এর শেষদিকে হায়দরাবাদে অনুষ্ঠিত প্রবাসী ভারতীয় দিবস সম্মেলনের সময় এটি চালু করা হয়েছিল। [১]
· ভারতের সংবিধান ভারতীয় নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রাখতে বাধা দেয়। যেমন ওসিআই ভারতের আইন অনুসারে ভারতের প্রকৃত নাগরিকত্ব নয় [২] কারণ এর অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে যেমন ভোট দেওয়ার অধিকার, সাংবিধানিক দপ্তর রাখার অধিকার এবং কৃষিজগত সম্পত্তি কেনার অধিকার নেই। [৩]
· ওসিআই ডকুমেন্টের জন্য আবেদন ও ব্যবহার করতে, ধারককে অবশ্যই পাকিস্তান ও বাংলাদেশ বাদে অন্য দেশের নাগরিক হতে হবে এবং অন্য একটি পাসপোর্ট রাখতে হবে।
No comments:
Post a Comment
Please do not enter any Link in the comment box.