Saturday, March 5, 2022

ভারতের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি আলোচনা কর | Discuss the amending procedure of the constitution of India

 

Discuss the amending procedure of the constitution of India
ভারতের সংবিধানের সংশোধন পদ্ধতি আলোচনা কর| 

Does it make the constitution a flexible one? 

......... 

ভূমিকা:

সাধারণ অর্থে 'সংশোধন' বলতে 'উন্নতিসাধন: কে বোঝায়। কিন্তু 'সংবিধান সংশোধন' কথাটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়। বিদ্যমান সংবিধানের কোন একটি অংশ বা অংশগুলি বর্জন, পরিবর্তন বা নতুন কোন অংশের সংযোজনকে সংবিধান সংশোধন বলা হয়। তবে সংবিধান সংশোধন এই কথাটি নিয়ে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে, কারো মতে সংবিধান সংশোধন বলতে সংবিধানের যে কোন অংশের যেকোনো ধরনের পরিবর্তন কে বোঝায়। অনেকে অবশ্য এর ব্যাপক অর্থে সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি প্রয়োগ করা বিরোধী। এরা মনে করেন যে, সংবিধান হলো একটি 'পবিত্র দলিল'। তাই একে ইচ্ছামতো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বর্জন করতে পারেন না। প্রখ্যাত আইনজীবী এন এ পালকিওয়ালা উপরোক্ত দুটি অভিমতের সমন্বয় সাধন করেন সংবিধান সংশোধনের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা নির্দেশ করেছেন।

তার মতে, সংবিধান সংশোধন বলতে বোঝায় (ক) সংবিধানের উন্নতিসাধন অর্থাৎ ত্রুটি-বিচ্যুতি গুলিকে অপসারণ করা, এবং

(খ) সেই ধরনের পরিবর্তন সাধন করা যার ফলে সংবিধানের উৎকর্ষ সাধন না হলেও তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য গুলি ধ্বংস না হয়।

সংবিধান সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা:

বিখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লর্ড ব্রাইস সংশোধন পদ্ধতি ভিত্তিতে সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় দুষ্পরিবর্তনীয় এই দুই ভাগে ভাগ করা কে বিজ্ঞানসম্মত গুলো মনে করেন। আইন সভায় যে পদ্ধতি অনুসরণ করে দেশের সাধারণ আইন প্রণয়ন ও আইন পরিবর্তন করে, সেই পদ্ধতি অনুসারে সংবিধান পরিবর্তিত বা সংশোধিত হয়, তবে সেই সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। এইরূপ সংবিধানের ধারা গুলি পরিবর্তনের জন্য কোন বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন হয় না। যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ড প্রতি দেশের সংবিধান এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত।


সাধারণ আইন প্রণয়নের পদ্ধতি অনুসারে সংবিধান কে পরিবর্তন বা সংশোধন করা যায় না, তাকে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান বলা হয়। এইরূপ সংবিধানে কোন অংশের পরিবর্তন সাধনের জন্য বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধানের উদাহরণ। যারা সংবিধানকে দুষ্পরিবর্তনীয় করার পক্ষপাতি তাদের মতে, সংবিধান হলো দেশের পবিত্র মৌলিক আইন। এই মৌলিক আইন কে কটি সহজে পরিবর্তন বা সংশোধন করা সম্ভব হলে ক্ষমতাসীন দল বা গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে বারংবার সংবিধান সংশোধন করে জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করতে পারে। এমনকি, এইভাবে সংবিধান সংশোধন করে শাসকগোষ্ঠীর নাগরিকদের মৌলিক অধিকার খর্ব, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে এককেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ধ্বংস করে স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থা কায়েম করতে পারে। কিন্তু যারা সুপরিবর্তনীয় সংবিধান প্রবর্তনের পক্ষপাতী, তারা এই সব যুক্তি মেনে নিতে সম্মত নয়। তাদের মতে সমাজ যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি পরিবর্তনশীল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি। জনগণের মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য সংবিধানকে যদি সংশোধন করা না হয় তাহলে তাদের মনের পুঞ্জিভূত অসন্তোষ একদিন বিক্ষোভ এবং গণবিপ্লবের আকার ধারণ করে রাষ্ট্র ও সরকারের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে পারে। এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচারপতি খান্না কেশব আনন্দ ভারতী মামলায় প্রদত্ত রায় বলেছেন, সংবিধানকে সংশোধন করার ব্যবস্থা না থাকলে জনসাধারণের সংবিধানের পরিবর্তন সাধনের জন্য বিপ্লবের মধ্য সংবিধান গৃহীত ব্যবস্থা গ্রহণ করত।

সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি:

সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারায় সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি আলোচনা করা আছে। এই ধারায় দুটি পদ্ধতিতে সংবিধান সংশোধন করা গেলেও সংবিধান সংশোধনের তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলি হল--

(১) সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্লামেন্ট কর্তৃক এককভাবে সংবিধানের সংশোধন।

(২) বিশেষ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পার্লামেন্ট কর্তৃক এককভাবে সংবিধানের সংশোধন।

(৩) কেন্দ্রীয় ও রাজ্য আইনসভা কর্তৃক যৌথভাবে সংবিধান সংশোধন।

[১] সংবিধানের এমন কতগুলি ধারা রয়েছে, যে গুলির পরিবর্তন সাধন বা সংশোধনের জন্য কোন বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন হয় না। পার্লামেন্ট সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সমর্থনে অর্থাৎ সাধারণ বিল পাসের পদ্ধতিতে একক ভাবে এই সব অংশের পরিবর্তন তথা সংশোধন করতে পারে। এসব ক্ষেত্রে পার্লামেন্ট বিশেষ সংখ্যা গরিষ্ঠতার কিংবা রাজ্য আইনগুলির আইনসভার সম্মতির কোন প্রয়োজন নেই। এইভাবে পার্লামেন্টে গৃহীত হওয়ার পর সংশোধনী বিলটি রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয় এবং সম্মতি লাভ করার পর তা গৃহীত হয়। 


নতুন রাজ্য গঠন, রাজ্য পুনর্গঠন, পুরাতন রাজ্যের সীমানা কিংবা নাম পরিবর্তন, রাজ্য আইনসভার উচ্চকক্ষ তথা বিধান পরিষদের বিলোপ সাধন, পার্লামেন্টের সদস্যদের বেতন ও ভাতা, ভারতীয় নাগরিকতা ইত্যাদি বিষয় এই প্রথম পদ্ধতি অনুসারে সংশোধন করা যায়।

[২] সংবিধান সংশোধনের দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসারে সংবিধান কিছু কিছু অংশের পরিবর্তন বা সংশোধন করতে হলে কেন্দ্রীয় আইনসভা পার্লামেন্টের দুটি কক্ষের মোট সদস্যের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন একান্ত প্রয়োজন। এইভাবে পার্লামেন্টের প্রতিটি কক্ষের গৃহীত হওয়ার পর সংশোধনী বিলটিকে রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য প্রেরণ করা হয়। রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাভের পর তা গৃহীত হয়।

     সংবিধানের মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি সমূহ সংশোধনী এই ধরনের সংশোধনী পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

[৩] সংবিধানের ৩৬৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতার পরিধি, সুপ্রিমকোর্ট এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ও অঙ্গ রাজ্য সমূহের হাইকোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে, পার্লামেন্ট অঙ্গরাজ্য গুলির প্রতিনিধিত্ব এবং ৩৬৮ নং ধারায় বর্ণিত সংবিধান সংশোধন পদ্ধতি সম্পর্কিত সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাব কে পার্লামেন্টের প্রতিটি কক্ষের মোট সদস্য এবং উপস্থিত অবদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ কর্তিক সমর্থিত হতে হয়। এইভাবে পার্লামেন্ট উভয় কক্ষের সমর্থন লাভের পর বিলটিকে রাজ্য আইনসভার অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে এবং রাজ্য আইনসভা সমর্থন লাভ করলে প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতি অনুমোদনের জন্য প্রেরিত হয় রাষ্ট্রপতি অনুমোদন করলে সংবিধান সংশোধিত হয়।

----------------------

আমাদের সংবিধানে এখনও পর্যন্ত ১০৪টি সংশোধনী হয়েছে । এই সংশোধনীগুলির লক্ষ্য, সমাজ যাতে সংবিধানের মূল ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন সমস্যার মোকাবিলা করতে পারে।

প্রথম সংশোধনী (১৯৫১):

বিচার ব্যবস্থার হস্তক্ষেপ থেকে জমি সংস্কার ও অন্য আইনগুলিকে সুরক্ষা কবচ প্রদান।নাগরিকের অন্যতম মৌলিক অধিকার 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা'-কে তিনটি শর্তসাপেক্ষ সীমাবদ্ধতা দ্বারা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা।

সপ্তম সংশোধনী (১৯৫৬):

ভাষার ভিত্তিতে দেশকে ১৪টি রাজ্য ও ৬টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয় । বুনিয়াদি শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের জন্য ৩৫০-এ ধারা সংবিধানে যুক্ত করা হয়।

২৪ তম সংশোধনী (১৯৭১):

সংবিধানের যে কোনও অংশ সংশোধনের ক্ষমতা রয়েছে লোকসভার হাতে । সংবিধানের কোনও সংশোধনীতে যদি সংসদের দুই কক্ষই সম্মতি দেয়, তবে রাষ্ট্রপতিকে অনিবার্যভাবে তা অনুমোদন করতে হবে।

২৯ তম সংশোধনী (১৯৭২):

সংবিধানের নবম তফসিল পরিবর্তন করা হয়।

কেরালার সরকারের দুটি 'ভূমি সংস্কার আইন' নবম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৪২ তম সংশোধনী (১৯৭৬):

সংবিধানের প্রস্তাবনায় 'সোশালিস্ট, সেকুলার ও ইন্টেগ্রিটি' শব্দ তিনটি যুক্ত করা হয়। নাগরিক কর্তব্যর তালিকা তৈরি করা হয় ।রিট পিটিশন ও বিচার ব্যবস্থার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের সীমা নিয়ন্ত্রণ। ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিস ফার্ম প্রতিষ্ঠা।

৪৪ তম সংশোধনী (১৯৭৮):

জরুরি অবস্থা জারির ক্ষেত্রে 'সশস্ত্র বিদ্রোহ' শব্দটির পরিবর্তে 'অভ্যন্তরীণ গোলযোগ' শব্দ দু'টি ব্যবহার করা হবে। রাষ্ট্রপতি নিজে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রপতিকে জানালে তবেই তিনি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারবেন। মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে সম্পত্তির অধিকারকে বাদ দেওয়া হল।

৬১ তম সংশোধনী (১৯৮৯):

৩২৬ নং ধারা পরিবর্তন করা হয় এবং ভোটাধিকার অর্জন এর বয়সসীমা ২১ বছর থেকে কমিয়ে ১৮ বছর করা হয়।

৭৩ ও ৭৪ তম সংশোধনী (১৯৯২):

স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার প্রদান।গ্রাম পঞ্চায়েত ও পৌর সংস্থাগুলিকে সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদান।'মিউনিসিপ্যালিটি'-তে নতুন অংশ যুক্ত করা হল।সমস্ত স্থানীয় সংস্থাগুলিতে সরাসরি নির্বাচনের অধিকার।

৮৬ তম সংশোধনী (২০০২):

৬ থেকে ১৪ বছরের শিশুদের জন্য শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত।

শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক।

৯২ তম সংশোধনী (২০০৩):

সংবিধানের অষ্টম তফসিলে বোডো, ডোগরী, মৈথিলী ও সাঁওতালি ভাষা কে যুক্ত করা হয় ফলে বর্তমানে অষ্টম তফসিলে স্বীকৃত ভাষার সংখ্যা হল ২২টি।

১০১ তম সংশোধনী (২০১৬):

269-এ ও 279-এ ধারায় GST (গুডস সার্ভিসেস ট্যাক্স) চালু।

১০২ তম সংশোধনী (২০১৮):

পশ্চাদপদ শ্রেণির জন্য গঠিত হল জাতীয় কমিশন এবং তাকে সাংবিধানিক মর্যাদা প্রদান।

১০৩ তম সংশোধনী (২০১৯):

শিক্ষা ও চাকরিতে আর্থিকভাবে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য 10 শতাংশ সংরক্ষণ।

১০৪ তম সংশোধনী (২০২০):

লোকসভায় SC ST দের জন্য আসন সংরক্ষণ সত্তর বছর থেকে আশি বছর পর্যন্ত বাড়ানো। লোকসভা এবং রাজ্য বিধানসভায় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসন সরানো হয়েছে।

 আলোচনা সাপেক্ষে এটা বলায় যায় যে ভারতীয় সাংবিধানিক সংশোধনী পদ্ধতি ভারতের সংবিধান সংশোধনের জন্য বিল একমাত্র সংসদেই উত্থাপন করা যায়। সংসদের যে-কোনও কক্ষেই এই বিল উত্থাপন করা যায়। কিন্তু রাজ্য বিধানসভায় সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত কোনও বিল উত্থাপন করা যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার বা সংসদের যে-কোনও কক্ষের যে-কোনও সাংসদ বিলের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারেন।

No comments:

Post a Comment

Please do not enter any Link in the comment box.

Featured Post

ugb semester 2 exam form fill up and malda women's college payment

 UGB SEMESTER 2 EXAM FORM FILL UP 2022 UGB 2ND SEMESTER STUDENT LOGIN PAGE Malda Women's College STUDENT PORTAL সম্পূর্ণ ভিডিও দেখে সহজে...