Friday, March 4, 2022

ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করাে। How does the Supreme Court discharge its role as the interpreter and the guardian of the constitution?

Discuss the composition and jurisdiction of the Supreme Court of India. How does the Supreme Court discharge its role as the interpreter and the guardian of the constitution?


----

সুপ্রিম কোর্টের গঠন



সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যা কত হবে তা নির্ধারণের

ভার সংবিধান কর্তৃক পার্লামেন্টের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। মূল সংবিধানের ১২৪ নং
ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট আইন করে যতদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যা
বৃদ্ধি না করে ততদিন পর্যন্ত সুপ্রিমকোর্ট ১ জন প্রধান বিচারপতি এবং অনধিক ৭ জন
বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়। ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে পার্লামেন্ট আইন প্রণয়ন করে মােট
বিচার পতি র সংখ্যা বাড়িয়ে ২৬ জন করেছে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রণীত আইন অনুসারে ১
জন প্রধান বিচারপতি এবং সর্বাধিক ৩০ জন অন্যান্য বিচারপতি-সহ মােট ৩১ জন বিচারপতি
নিয়ে বর্তমানে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট গঠনের কথা বলা হয়েছে। তা ছাড়া
বিচারপতিদের নিয়ােগ করেন। রাষ্ট্রপতি যদি মনে করেন বিচারপতিদের নিয়ােগের পূর্বে
সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার, তাহলে তিনি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন। প্রধান বিচারপতি ব্যতীত অন্যান্য বিচারপতি নিয়ােগের পূর্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করা বাধ্যতামূলক। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে যে পরামর্শ দেন সেই পরামর্শ অনুযায়ীই বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।
ব্যতীত অন্যান্য বিচারপতি নিয়ােগের পূর্বে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করা
বাধ্যতামূলক। প্রকৃতপক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে যে
পরামর্শ দেন সেই পরামর্শ অনুযায়ীই বিচারপতিগণ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন।

বয়স পর্যন্ত পদে আসীন থাকতে পারেন। বিচারপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে
তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা সংসদের প্রস্তাব অনুসারে রাষ্ট্রপতি তাকে
ইমপিচমেন্ট পদ্ধতির সাহায্যে পদচ্যুত করে থাকেন। অসদাচরণ অথবা উৎকোচ গ্রহণের
অভিযোগ সংক্রান্ত কোনাে প্রস্তাব পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে উপস্থিত হলে এবং
ভােটদানকারী সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশের ও প্রত্যেক কক্ষের মােট সদস্যদের
সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা সমর্থিত হলে প্রস্তাবটি রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হয়।
রাষ্ট্রপতি ওই প্রস্তাব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিচারপতিকে পদচ্যুত করে থাকেন। অবসর
গ্রহণের পর কোনাে বিচারপতি ভারতের কোনাে আদালতে ওকালতি করতে পারেন না।
বিচারপতিগণের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার জন্যই সংবিধানে এই ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে।
অনুসারে বিচারপতিগণের বেতন ও ভাতা সংবিধানের দ্বিতীয় তপশিলে নির্দিষ্ট করা আছে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মাসিক ২,৮০,০০০ টাকা ও অন্যান্য বিচারপতিরা ২,৫০,০০০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিচারপতিরা অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভােগ করে থাকেন।
বেতন পেয়ে থাকেন। বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা ভারতের সঞ্চিত তহবিল থেকে প্রদান করা
হয়ে থাকে। এ ছাড়া বিচারপতিরা অন্যান্য ভাতা ও সুযোগ সুবিধা ভােগ করে থাকেন।
সুপ্রিম
কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি (Dual role) পালন করে থাকে তাই সুপ্রিমকোর্টকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে হয়। সুপ্রিমকোর্টের কর্মক্ষেত্রের মূলত চারটি এলাকা রয়েছে। এই এলাকাগুলির মধ্য দিয়েই সুপ্রিমকোর্ট তার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করে থাকে। এই এলাকাগুলি হল যথাক্রমে
অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন করতে হয়। সুপ্রিমকোর্টের কর্মক্ষেত্রের মূলত চারটি
এলাকা রয়েছে। এই এলাকাগুলির মধ্য দিয়েই সুপ্রিমকোর্ট তার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ
কাজ সম্পাদন করে থাকে। এই এলাকাগুলি হল যথাক্রমে

  • (1) মূল এলাকা (Original Jurisdiction),
  • (2) আপিল এলাকা (appellate Jurisdiction),
  • (3) পরামর্শদান এলাকা (Advisory Jurisdiction),
  • (4) আদেশ, নির্দেশ ও লেখ জারি এলাকা
  • জারি এলাকা

  • এক পক্ষ যদি ভারত
  • সরকার হয় তাহলে অপরপক্ষ হবে এক বা একাধিক রাজ্য সরকার,
  • অথবা এক পক্ষ যদি
  • হয় ভারত সরকার এবং এক বা একাধিক রাজ্য সরকার তাহলে অন্য পক্ষও হয় একাধিক
  • রাজ্য সরকার,
  • আবার উভয় পক্ষই
  • যদি রাজ্য সরকার হয় তাহলে সেই বিরােধের মীমাংসা সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকায়
  • হয়ে থাকে।

৭১(১) নং ধারায় উল্লেখ আছে, সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকা রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনােরকম বিরােধ সৃষ্টি হলে তার মীমাংসা করতে পারে। এই কারণে সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা অনন্য এলাকা (
মূল এলাকা রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনােরকম বিরােধ
সৃষ্টি হলে তার মীমাংসা করতে পারে। এই কারণে সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা অনন্য
এলাকা (exclusive Jurisdiction)
Jurisdiction) বলেও অভিহিত করা হয়। তবে সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পূর্বে সম্পাদিত কোনাে চুক্তি
করা হয়। তবে সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পূর্বে সম্পাদিত কোনাে চুক্তি, সনদ, সন্ধি প্রভৃতি যা সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পরও চালু রয়েছে তার থেকে কোনােরূপ বিরােধের উৎপত্তি ঘটলে সেই বিরােধের মীমাংসা সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকায় নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয় না।
প্রভৃতি যা সংবিধান কার্যকরী হওয়ার পরও চালু রয়েছে তার থেকে কোনােরূপ বিরােধের
উৎপত্তি ঘটলে সেই বিরােধের মীমাংসা সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকায় নিষ্পত্তি করা
সম্ভব হয় না।
দেওয়ানি আপিল, (c)
ফৌজদারি আপিল, (d)
বিশেষ অনুমতি সূত্রে আপিল।
  • (a) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল:
  • সংক্রান্ত আপিল: সংবিধানের ১৩২ (১) নং ধারা অনুসারে দেওয়ানি, ফৌজদারি কিংবা অন্য যেকোনো মামলার ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে হাইকোর্ট যদি এই মর্মে একটি সার্টিফিকেট দেয় যে উক্ত মামলার সঙ্গে সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত রয়েছে, তাহলে সেই মামলা বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করা যায়।
  • (b) দেওয়ানি আপিল: সংবিধানের ১৩৩ (১) নং ধারায় উল্লেখ আছে। যে, কোনো দেওয়ানি মামলায় হাইকোর্টের রায় বা দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। যদি হাইকোর্ট এই মর্মে প্রমাণপত্র দেয় যে, সংশ্লিষ্ট মামলাটির সঙ্গে আইনের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জড়িত রয়েছে তাহলে সেই মামলার বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়।
  • (c) ফৌজদারি আপিল: ফৌজদারি মামলায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যেতে পারে। সেই বিষয়গুলি হল-
  • বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যেতে পারে। সেই বিষয়গুলি হল- (1) যদি হাইকোর্ট কোনাে অভিযুক্ত ব্যক্তির যুক্তির আদেশ বাতিল করে, তাকে মৃত্যুদণ্ড ঘােষণা করে, (2) নিম্ন আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত কোনাে ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে, (3) যদি কোনাে মামলা সুপ্রিম কোর্টে আপিল যোগ্য এই মর্মে হাইকোর্ট নিজে থেকে কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করলে [১৩৪(২) নং ধারা]।
  • যুক্তির আদেশ বাতিল করে,
  • তাকে মৃত্যুদণ্ড ঘােষণা করে, (2) নিম্ন আদালতের রায়ে নির্দোষ প্রমাণিত কোনাে ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে
  • কোনাে ব্যক্তিকে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড প্রদান করলে, (3) যদি কোনাে মামলা সুপ্রিম কোর্টে আপিল যোগ্য এই মর্মে হাইকোর্ট নিজে থেকে কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করলে [১৩৪(২) নং ধারা]।
  • নিজে থেকে কোনো সার্টিফিকেট প্রদান করলে [১৩৪(২) নং ধারা]।
  • (d) বিশেষ অনুমতি সূত্রে আপিল: সংবিধানের ১৩৬ (১) নং ধারা অনুসারে যে-কোনাে আদালত বা ট্রাইবিউনালের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার বিশেষ অনুমতি (
  • যে-কোনাে আদালত বা ট্রাইবিউনালের রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার বিশেষ
  • অনুমতি (Special Leave)
  • সুপ্রিমকোর্ট নিজেই প্রদান করতে পারে।


বন্দি-প্রত্যক্ষীকরণ (Hebeas Corpus), (b)
পরমাদেশ (Mandamus), (c)
প্রতিষেধ (Prohibition), (d)
উৎপ্রেষণ (Certiorari), (e)
অধিকার পৃচ্ছা (Quo Warranto) প্রভৃতি চরিত্রের লেখ জারি করে থাকে। তবে জরুরি অবস্থা বলবৎকালীন অবস্থায় এইরূপ পদক্ষেপ সুপ্রিম কোর্ট নাও গ্রহণ করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলিগুলির গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অন্যান্য
যেসব দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্ট পালন করে থাকে। সেগুলি হল
  • (a) ১২৯ নং ধারা অনুযায়ী অভিলেখ আদালত (Court of Records) হিসেবে দায়িত্ব পালন করা,
  • (b) সুপ্রিম কোর্ট নিজের অবমাননার জন্য অবমাননাকারীকে শাস্তি প্রদান (১৪২ (২) নং ধারা],
  • অবমাননাকারীকে শাস্তি প্রদান (১৪২ (২) নং ধারা],
  • (c) নিজের দেওয়া রায় বা সিদ্ধান্তের পুনর্বিবেচনা করা প্রভৃতি।
  • পুনর্বিবেচনা করা প্রভৃতি।

কার্যাবলি আলােচনার শেষে এর ক্ষমতার পরিধি সহজেই অনুমেয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞ
আল্লাদি কৃত স্বামী আয়ারের ভাষায় বলা যায় যে, কাজের পরিধি ও ক্ষমতার বৈচিত্র্যের দিক থেকে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের অবস্থান এক ও অদ্বিতীয় (একমেবাদ্বিতীয়ম)।
সুপ্রিমকোর্টের অবস্থান এক ও অদ্বিতীয় (একমেবাদ্বিতীয়ম)।


বিচারপতিদের নিয়ােগ পদ্ধতি: সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে রাষ্ট্রপতি


বিচারপতিদের যােগ্যতা: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হতে হলে একজন ব্যক্তিকে প্রথমত, ভারতীয় নাগরিক হতে হবে এবং দ্বিতীয়ত, কমপক্ষে ৫ বছর কোনাে হাইকোর্টে বিচারপতি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা অথবা ১০ বছর অ্যাডভােকেট হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং তিনি রাষ্ট্রপতির মতে বিশিষ্ট আইনজ্ঞ হবেন।


বিচারপতিদের কার্যকাল ও পদচ্যুতি: সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণ ৬৫ বছর


বিচারপতিদের বেতন ও ভাতা: পার্লামেন্ট-প্রণীত (২০০৯ খ্রি.) আইন



ভারতীয় বিচারব্যবস্থায় যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট দ্বৈত ভূমিকা


(1) মূল এলাকা (Original Jurisdiction): ভারতীয় সংবিধানের ১৩১ নং ধারা অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মূল এলাকা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত বিরােধের মীমাংসা হয়ে থাকে। কোনো বিরােধের সঙ্গে যদি এমন প্রশ্ন জড়িত থাকে যার উপর বৈধ অধিকারের অস্তিত্ব ও প্রসার নির্ভর করে এবং সেই বিরােধের-


সংবিধানের


(2) আপিল এলাকা (Appellate Jurisdiction): ভারতের যে-কোনাে রাজ্যের হাইকোর্টের রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করা যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল এলাকা চার ভাগে ভাগ করা যায় - (a) সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল, (b)


(3) পরামর্শদান এলাকা (Advisory Jurisdiction): সংবিধানের ১৪৩ (১) নং ধারায় উল্লেখ করা রয়েছে যে, সর্বজনীন গুরুত্ব রয়েছে এমন কোনাে আইন বা তথ্য সংক্রান্ত প্রশ্ন রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন। সুপ্রিমকোর্টের অভিমত অনুযায়ী সরকার কাজ করতে বাধ্য থাকে না। সংবিধানের ১৪৩ (২) নং ধারানুযায়ী, সংবিধান চালু হওয়ার আগে সম্পাদিত সন্ধিচুক্তি, অঙ্গীকারপত্র যা আজ পর্যন্তও বলবৎ রয়েছে, সে বিষয়ে কোনাে বিরােধ দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আইনগত পরামর্শ চাইতে পারেন।


(4) আদেশ, নির্দেশ ও লেখ জারির এলাকা: সুপ্রিমকোর্ট ভারতীয় সংবিধানে স্বীকৃত এবং তৃতীয় অধ্যায়ে উল্লিখিত নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা হিসেবে চিহ্নিত। তাই ৩২ নং ধারানুসারে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি ক্ষুন্ন হলে তার প্রতিকার সুপ্রিম কোর্ট করে থাকে। এই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়ােজনমতাে(a)


উপরোক্ত


ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা ও

 

How does the Supreme Court discharge its role as the interpreter and the guardian of the constitution?



---

যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের উপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে তা পর্যালোচনা করে আমরা বলতে পারি যে, বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলকে উপেক্ষা করে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট তার যথাযথ ভূমিকা পালনে নজির সৃষ্টি করে। কোন স্বামী আইনের ভাষায়, পৃথিবীর অন্য কোনাে অঞ্চলের সুপ্রিম কোর্ট থেকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অনেক বেশি শক্তিশালী ("The Supreme Court in the Indian Union has more powers than any Supreme Court in any Part of the World.”)এই কারণে যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে, সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে, সংবিধানের অভিভাবক ও চূড়ান্ত ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে, নাগরিকের মৌলিক অধিকারের রক্ষাকর্তা এবং রাষ্ট্রপতির পরামর্শদাতা হিসেবে ভারতের সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক জোহারি মন্তব্য করেছেন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতারা ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন যে, সংবিধানের প্রকৃত অভিভাবকের মতো সুপ্রিম কোর্টের আচরণ উচিত (“What our Founding Fathers really desired is that the Supreme Court should behave like true guardian of the Constitution.")



সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা



(1) সংবিধানের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা কারক হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা: সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে সুপ্রিমকোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ভারতীয় সংবিধানের যে-কোনাে অংশের চূড়ান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের আছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের আদেশ ইত্যাদি সংবিধানবিরােধী কি না তা পর্যালােচনা করে দেখে। এ প্রসঙ্গে এ কে গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য (১৯৫০ খ্রি.), গােলকনাথ বনাম পাঞ্জাব রাজ্য (১৯৬৭ খ্রি.), কেশবানন্দ ভারতী বনাম কেরল রাজ্য (১৯৭৩ খ্রি.) প্রভৃতি মামলাগুলিতে সুপ্রিম কোর্টের রায় দান বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।



(2) যুক্তরাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা: সুপ্রিম কোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের অখণ্ড বিচারব্যবস্থায় ক্রমােচ্চ স্তরবিন্যাসের শীর্ষে ভারতীয় অবস্থিত। এটি একদিকে দেশের সর্বোচ্চ আপিল আদালত, অন্যদিকে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রীয় বিচারালয়। দেশের সর্বোচ্চ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্র এবং রাজ্য এবং রাজ্য বনাম রাজ্যের যুক্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ককে রক্ষা করে। আবার যে লিখিত সংবিধানের মাধ্যমে এই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামাে প্রতিষ্ঠিত এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন করা আছে, সেই সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও চরম ব্যাখ্যাকর্তা হল সুপ্রিমকোর্ট। ভারতীয় নাগরিকদের সংবিধান-স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের রক্ষণাবেক্ষণ ও সুপ্রিম কোর্ট করে থাকে। সংবিধানের ভাষায় বলা যায়, ("The state shall not make any law which takes away or abridges the rights conferred by this part and any law made in contravention of this clause, to the extend of the contravention be avoid Art 13(2).”)



(3) সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা: সর্বোচ্চ আপিল আদালত হিসেবে পরিচিত সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা অন্য যে-কোনাে আদালতের থেকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত কোনাে গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্নের ক্ষেত্রে মহাধর্মাধিকরণ (হাইকোর্ট) থেকে প্রধান ধর্মাধিকরণে রে (সুপ্রিম কোর্ট) আপিল করা যায়। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের নিকট আপিল করা যায়। সংবিধানের ১৩৬ নং ধারা অনুযায়ী সামরিক আদালত ছাড়া ভারতের যে-কোনাে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। আপিল আদালত হিসেবে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট যে ক্ষমতা ভােগ করে, তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট ভােগ করে না।



(4) রাষ্ট্রপতির আইনগত পরামর্শদাতা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা: জনসাধারণের স্বার্থ জড়িত এমন কোনাে আইন বা তথ্য সম্পর্কিত জটিল প্রশ্নের উদ্ভব ঘটলে বা উদ্ভবের সম্ভাবনা দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ চাইতে পারেন এবং সুপ্রিমকোর্টও সংবিধানের ১৪৩ (১) এবং ১৪৩ (২) নং ধারানুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিয়ে জনস্বার্থের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।



(5) সংবিধানের অভিভাবক ও রক্ষাকবচ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা: ভারতীয় সংবিধান ভারতবাসীর কাছে অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। সেই সংবিধানের অভিভাবকের ন্যায় সযত্নে রক্ষা করার দায়িত্বভার যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে পরিচিত সুপ্রিম কোর্টে উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের রক্ষাকবচ হিসেবে যে বিষয়গুলিতে সর্বদা দৃষ্টি রেখে চলে সেই বিষয়গুলি হল নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি কতটা সুরক্ষিত, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ সংবিধান অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করছে কি না প্রভৃতি।



(6) সুপ্রিম কোর্টের বিচার বিভাগীয় পর্যালােচনার ক্ষমতা: সুপ্রিম কোর্ট যে-সমস্ত বিষয়গুলি বিচার করে, সেগুলি হল পার্লামেন্ট-প্রণীত আইন সঠিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালগণের আদেশ সংবিধান বিরোধী কি না ইত্যাদি আর যদি পার্লামেন্ট-প্রণীত আইন, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপাল গণের আদেশ সংবিধানবিরােধী বলে প্রমাণিত হয় তাহলে সুপ্রিম কোর্ট তা অবৈধ বলে ঘােষণা করতে পারে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের এই ধরনের বিশেষ ক্ষমতা বিচারবিভাগীয় পর্যালােচনার ক্ষমতা (Power of Judicial Review) বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার যে, সুপ্রিমকোর্ট শুধুমাত্র দেখে আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতি সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কি না। সুপ্রিমকোর্ট কখনােই আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি অনুসারে বিচারকার্যের কোনাে ক্ষমতা প্রয়ােগ করতে পারে না।



(7) সামাজিক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা: সমাজের অনেক কুপ্রথা, অন্যায়, অত্যাচারিত, নিপীড়িত ও শোষিত মানুষের হয়ে কাজ করে সুপ্রিমকোর্ট নিজের অস্তিত্বকে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মামলায় রায় প্রদান করে অনেক সামাজিক ব্যাধি থেকে ভারতবাসীকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়েছে। অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবেও ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের ১৭(ক) অনুচ্ছেদ বাতিল করা, ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে বধূহত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চরম শাস্তির সপক্ষে রায়দান, ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে পরিবেশ সংরক্ষণ সংক্রান্ত নির্দেশ, ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের দুর্নীতির তদন্তে সি বি আইকে স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা প্রদান প্রভৃতি রায় বা সিদ্ধান্ত সমাজ পরিবর্তনে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছে।



সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকার সমালোচনা



সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা বা মর্যাদা একেবারেই সমালােচনার উর্ধ্বে নয়। সুপ্রিমকোর্ট পার্লামেন্ট দ্বারা খানিকটা নিয়ন্ত্রিত এবং মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা থেকে ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা কিছুটা হলেও কম। এই দুটি নিম্নে আলােচনা করা হল



(1) পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণের কারণে সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যা কর্তা হিসেবে পরিচিত সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা বেশি কি না তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন দেখা যায়, কারণভারতীয় সংবিধানের নমনীয় চরিত্রের জন্য অনেকসময় দেখা যায় সুপ্রিমকোর্ট প্রদত্ত রায়কে অতিক্রম করার উদ্দেশ্যে পার্লামেন্ট সংবিধান-সংশােধনের পথ গ্রহণ করে। যেমন গােলােকনাথ মামলা এবং কেশবানন্দ ভারতী মামলায় সুপ্রিমকোর্ট জানায় যে, পার্লামেন্ট সংবিধানের মূল কাঠামাে ছাড়া বাকি সব অংশই সংশােধন করতে পারে।



(2) মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা থেকে কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপক। যেমনমার্কিন সুপ্রিমকোর্ট কোনাে আইনের বৈধতা বিচারে কিংবা সংবিধান অনুযায়ী প্রণীত হচ্ছে। কি না তার বিচার করে আইনটিকে বৈধ বা অবৈধ ঘােষণা করে থাকে। অপরদিকে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্টের কোনাে আইনকে তখনই অবৈধ বলে ঘােষণা করতে পারে, যদি উক্ত আইনটি সংবিধানের কোনাে ধারা বা অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে। এর ফলে সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষুগ্ন হয়ে থাকে।



মূল্যায়ন : ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে বলা যায় যে, সুপ্রিমকোর্ট তার অস্তিত্বকে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। রাজনীতি পরিব্যাপ্ত কলুষিত সমাজ তথা রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করে এক পরিচ্ছন্ন রাষ্ট্রব্যবস্থা উপহার দেওয়াই সুপ্রিমকোর্টের কাছে এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট এক নির্দেশে ক্যাপিটেশন ফি নেওয়া বন্ধের নির্দেশ দেন তা ছাড়া ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতব্যাপী জুনিয়ার ডাক্তারদের যে ধর্মঘট সারাদেশের স্বাস্থ্য পরিসেবাকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল, তা সুপ্রিমকোর্টের হস্তক্ষেপের ফলে স্তিমিত হয়ে পড়ে। এইভাবে সুপ্রিমকোর্ট তার ভূমিকা পালনের মধ্য দিয়ে তার মর্যাদা এবং ঐতিহ্যকে ভারতবাসীর কাছে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে। এককথায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট শুধু সংবিধানের অভিভাবক ও ব্যাখ্যাকর্তাই নয়, সুপ্রিমকোর্ট গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসেবেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 ------------------



No comments:

Post a Comment

Please do not enter any Link in the comment box.

Featured Post

ugb semester 2 exam form fill up and malda women's college payment

 UGB SEMESTER 2 EXAM FORM FILL UP 2022 UGB 2ND SEMESTER STUDENT LOGIN PAGE Malda Women's College STUDENT PORTAL সম্পূর্ণ ভিডিও দেখে সহজে...