Friday, March 4, 2022

পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ | Zilla Parishad in West Bengal Panchayati Raj System |

পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থায় জেলা পরিষদ?

Zilla Parishad in West Bengal Panchayati Raj System।

ভূমিকা –

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। পঞ্চায়েতশব্দটির ব্যুৎপত্তি হিন্দি पंचायत থেকে। প্রাচীন ভারতে পাঁচজন সদস্য নিয়ে যে স্বশাসিত স্বনির্ভর গ্রামীণ পরিষদ গঠিত হত, তাকেই বলা হত পঞ্চায়েত। আধুনিককালে এই শব্দটির সঙ্গে যুক্ত হয় এক সমষ্টিগত চেতনা। পঞ্চায়েতশব্দটির লোকপ্রচলিত অর্থ হয়ে দাঁড়ায় পাঁচ জনের জন্য। সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাওয়ার পর বর্তমানে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় স্তরের সরকার। বর্তমানে গ্রামবাংলাকে কেন্দ্র করে যে প্রশাসনিক, জনকল্যাণমূলক, বিচারবিভাগীয় ও প্রতিনিধিত্বমূলক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত, তাকেই পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা নামে অভিহিত করা হয়। ১৮৭০ সালে প্রথম বঙ্গীয় গ্রাম চৌকিদারি আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। স্বাধীনতার পর গণতান্ত্রিক ভারতে এই ব্যবস্থা তৃণমূলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন পাস হয় ও সংবিধান সংশোধন করা হয়। ১৯৫৭ সালে সর্বপ্রথম পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত আইন বিধিবদ্ধ হয়। ১৯৫৭ ও ১৯৬৩ সালের আইন অনুসারে পশ্চিমবঙ্গে চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর ১৯৭৩ সালে নতুন আইনের মাধ্যমে চালু হয় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনী অনুসারে পঞ্চায়েতি রাজ ব্যবস্থাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং ১৯৯২ সালে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত আইনটিকেও পুনরায় সংশোধিত করা হয়।

প্রাচীন ভারতের গ্রামীণ শাসনব্যবস্থার মূল ভিত্তি ছিল পাঁচজন নির্বাচিত বা মনোনীত ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত গ্রামীণ স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠান পঞ্চায়েত। এই প্রতিষ্ঠানের হাতে ন্যস্ত ছিল গ্রামগুলির প্রশাসন, আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও বিচারব্যবস্থা পরিচালনের দায়িত্ব। মুঘল আমল পর্যন্ত ভারতের গ্রামগুলি এই পঞ্চায়েত ব্যবস্থা দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হত। কিন্তু মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের এই সুমহান ঐতিহ্যশালী শাসনব্যবস্থার সম্পূর্ণ অবসান ঘটে। তার বদলে ভারতের রাজশক্তি নিজ কায়েমি স্বার্থ টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে ভারতের গ্রাম ও নগরাঞ্চলে ব্রিটিশ ধাঁচের এক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। আধুনিক পঞ্চায়েতি রাজশাসনব্যবস্থা মহাত্মা গান্ধীর মস্তিষ্কপ্রসূত এক ধারণা। তিনি চেয়েছিলেন স্বাধীন ভারতের আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠুক গ্রামকে কেন্দ্র করে। স্বাধীনতার পরে মূলত তার আদর্শ অনুসরণ করেই ভারতে গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। এর পরে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই ব্যবস্থাকে আধুনিক যুগের উপযোগী ও আরও বেশি কার্যকরী করে তোলার জন্য ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন সরকারি পদক্ষেপ গৃহীত হয়। পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের রাজত্বকালে (১৯৭৭-বর্তমান) পঞ্চায়েত ব্যবস্থার সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধিত হয়। মনে করা হয়ে থাকে, এই সরকারের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সাফল্যের জন্য পঞ্চায়েত সংস্কার ও এই ব্যবস্থা থেকে প্রাপ্ত সুফলগুলি অনেকাংশে দায়ী। এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ডক্টর অশোক মিত্রের উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য, “...যদি পঞ্চায়েত ব্যর্থ হয়, সিপিআই(এম)-এর পরীক্ষানিরীক্ষাও ব্যর্থ হবে।

 

জেলা পরিষদ 

পূর্বতন জেলা বোর্ড বাতিল করে গঠিত হয় জেলা পরিষদ। একমাত্র কোচবিহার জেলায় কোনও জেলা বোর্ড না থাকায় সেখানে নতুন করে জেলা পরিষদ গঠন করা হয়।
এই জেলা পরিষদ সদস্য ও সহযোগী সদস্য নিয়ে চার বছরের জন্য গঠিত হত। সহযোগী সদস্যদের মধ্যে থাকতেন মহকুমা শাসক, জেলা পঞ্চায়েত আধিকারিক প্রমুখ সরকারি প্রশাসক ও কর্মচারী আর সদস্যদের মধ্যে থাকতেন – (১) আঞ্চলিক পরিষদের সভাপতিগণ (এঁরা পদাধিকার বলে সদস্য হতেন); (২) প্রত্যেক মহকুমা থেকে অধ্যক্ষদের দ্বারা নির্বাচিত দু-জন সদস্য; (৩) জেলায় বসবাসকারী অথবা জেলা থেকে নির্বাচিত অথচ মন্ত্রী নন এমন সাংসদ ও বিধায়ক; (৪) সরকার মনোনীত
 পুরসভা বা পৌরসংস্থার চেয়ারম্যান বা মেয়র; (৫) জেলা স্কুল বোর্ডের সভাপতি এবং (৬) সরকার মনোনীত অনধিক দু-জন মহিলা।
জেলা পরিষদের প্রথম সভায় একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস-চেয়ারম্যানকে নির্বাচিত করা হত। চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকত আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজ পরিচালনার দায়িত্ব। তবে পরিষদের নীতি ও প্রস্তাবগুলি রূপায়ণের দায়িত্ব অর্পিত ছিল একটি প্রশাসনিক যন্ত্রের উপর; যার শীর্ষে থাকতেন কার্যনির্বাহী আধিকারিক। এছাড়াও পরিষদের সচিবের দায়িত্ব সামলাতেন অপর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক। এঁরা দুজনেই
 পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনিক কৃত্যক বা ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিল সার্ভিস (ডাবলিউবিসিএস)-এর সদস্য ছিলেন।
জেলা পরিষদের প্রধান কাজ ছিল উন্নয়নমূলক। অন্যান্য কাজের মধ্যে ছিল আঞ্চলিক পরিষদের বাজেট অনুমোদন এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির সমন্বয় সাধন।

চার-স্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামোন্নয়নের মূল দায়িত্ব গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতে ন্যস্ত থাকলেও সাংগঠনিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি দুর্বলই থেকে যায় এবং স্বভাবতই এদের কাজকর্ম অবহেলিত হতে থাকে। পূর্বতন ইউনিয়ন বোর্ডের যেসব কাজ ছিল অঞ্চল পঞ্চায়েতকে তার চেয়ে বেশি কাজ করতে হত না। বরং উন্নয়নমূলক কাজকর্মের হাত থেকে অঞ্চল পঞ্চায়েতগুলি রেহাই পেয়েছিল। বাস্তব ক্ষেত্রে গ্রাম ও অঞ্চল পঞ্চায়েত চালাবার মতো দক্ষ কর্মীর অভাবে ভুগছিল বাংলার গ্রামাঞ্চল। তা সত্ত্বেও ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ সালের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে এই ব্যবস্থা চালু হয়ে যায় পশ্চিমবঙ্গে। সরকার এদের হাতে কিছু প্রকল্পও অর্জন করেন। কিন্তু ১৯৬৭ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে সেসব প্রকল্প প্রত্যাহার করে নেন। এদিকে প্রথম নির্বাচনের পর আর নির্বাচন না হওয়ায় পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলিও নিষ্ক্রিয় ও জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে পঞ্চায়েত সংক্রান্ত আইনদুটি প্রণীত হওয়ায় পঞ্চায়েত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি।এই কারণে পঞ্চায়েত ব্যবস্থার পুনর্গঠনের প্রয়োজন অনুভূত হয়। এই উদ্দেশ্যে ১৯৭৩ সালে পাস হয় পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন বা ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত অ্যাক্ট। এই আইনবলে চার-স্তর পঞ্চায়েতের পরিবর্তে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত প্রবর্তিত হয় পূর্বতন অঞ্চল পঞ্চায়েত স্তরে গ্রাম পঞ্চায়েত, ব্লক স্তরে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা স্তরে জেলা পরিষদ।

জেলা পরিষদ

জেলা পরিষদ পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় তথা সর্বোচ্চ স্তর। জেলা পরিষদের নামকরণ করা হয় সংশ্লিষ্ট জেলার নামানুসারে। কলকাতা  দার্জিলিং জেলা বাদে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলায় জেলা পরিষদ বর্তমান। দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ি মহকুমায় জেলা পরিষদের সমক্ষমতা ও মর্যাদা সম্পন্ন একটি মহকুমা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত। পশ্চিমবঙ্গে সেই কারণে বর্তমানে মোট ২০টি জেলা পরিষদ রয়েছে।

সদস্য প্রত্যেক জেলা পরিষদে চার প্রকার সদস্য রয়েছেন। এঁরা হলেন, (১) জেলার অন্তর্গত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি (এঁরা পদাধিকার বলে সদস্য); (২) জেলার প্রত্যেক ব্লক থেকে প্রত্যক্ষভাবে নির্বাচিত অনধিক তিনজন সদস্য; (৩) জেলা থেকে নির্বাচিত অথচ মন্ত্রী নন এমন লোকসভা ও বিধানসভা সদস্য; এবং জেলার ভোটারতালিকায় নাম আছে অথচ মন্ত্রী নন এমন রাজ্যসভা সদস্য।
এছাড়া জনসংখ্যার অনুপাতে প্রত্যেক জেলা পরিষদে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষিত থাকে। তাছাড়াও তফশিলি জাতি ও উপজাতির জন্য সংরক্ষিত আসনের ১/৩ ভাগ আসন তফশিলি জাতি ও উপজাতির মহিলাদের জন্য এবং সর্বমোট আসনের ১/৩ ভাগ মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।

সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পঞ্চায়েতের প্রত্যেক সাধারণ নির্বাচনের পর জেলা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে থেকে একজন সভাধিপতি ও একজন সহকারী সভাধিপতি পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদ সদস্য অথচ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি এমন ব্যক্তিরা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা প্রতিদ্বন্দ্ব্বিতা করতে পারেন না। গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতির মতোই সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির পদে তফসিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই পদগুলিতে তফশিলি জাতি, উপজাতি ও মহিলা জনসংখ্যার অনুপাতে সংরক্ষিত এবং সংরক্ষিত আসনের ২/৩ অংশ আবার ওই সম্প্রদায়গুলির মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। তাছাড়া সর্বমোট সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদের ১/৩ অংশ আবার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত।
সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে পারেন অথবা রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট কারণে কোনও তাদের অপসারিত করতে পারেন। সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি পদচ্যূত হলে, পদত্যাগ করলে বা মারা গেলে যদি ওই পদদুটি শূন্য হয়, তবে পরিষদ নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নতুন সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতি নির্বাচন করেন এবং তিনি পূর্ববর্তী সভাধিপতি ও সহকারী সভাধিপতির অবশিষ্ট কার্যকাল পর্যন্ত দপ্তরে অধিষ্ঠিত থাকেন।

জেলা পরিষদের অধিবেশন প্রতি তিন মাস অন্তর জেলা পরিষদের অধিবেশন বসে। পরিষদের মোট সদস্যসংখ্যার ১/৪ অংশ অনুপস্থিত থাকলেই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে। এক্ষেত্রেও মুলতুবি বৈঠকের জন্য কোনও কোরামের প্রয়োজন হয় না। সভায় উত্থাপিত সমস্ত সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে গৃহীত হয়। উভয় পক্ষের সমসংখ্যক ভোট পড়লে সভাধিপতি নির্ণায়ক বা কাস্টিং ভোট প্রদান করে সমস্যা সমাধান করেন।

জেলা পরিষদ প্রশাসন

জেলা পরিষদের নীতিপ্রণয়ন ও কার্যসম্পাদনের জন্য জেলা পরিষদের সভাধিপতি বা তার অনুপস্থিতিতে সহকারী সভাধিপতি নেতৃত্বে একটি প্রশাসন যন্ত্র কাজ করে। সভাধিপতি পরিষদের আর্থিক ও কার্যনির্বাহী প্রশাসনের সাধারণ দায়িত্বে বহাল থাকেন ও পরিষদের দলিলপত্র রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়ী থাকেন। পরিষদের কাজকর্ম কয়েকটি কমিটির দ্বারা সম্পাদিত হয়ে থাকে। এই কমিটিগুলির অধ্যক্ষগণ জেলা পরিষদ প্রশাসনে নির্দিষ্ট দায়িত্ব বহন করে থাকেন।

প্রত্যেক জেলার জেলা-শাসক জেলা পরিষদের কার্যনির্বাহী আধিকারিকের পদে আসীন থাকেন। তাকে সহায়তা করেন একজন অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক; তিনি অতিরিক্ত জেলা-শাসকের মর্যাদাসম্পন্ন আধিকারিক। এছাড়াও অপর একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক পরিষদের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। এঁরা সকলেই রাজ্য সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হন।

 

জেলা পরিষদের কার্যাবলি

পঞ্চায়েত সমিতির মতো জেলা পরিষদের হাতেও আর্থিক উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কিছু কিছু দায়িত্ব ও ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে।

জেলা পরিষদের প্রাথমিক কাজ হল সামগ্রিকভাবে সমষ্টির উন্নয়ন ও সমাজের প্রতিটি মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে জেলার জন্য একটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং একটি বাৎসরিক পরিকল্পনা রচনা করা। এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বাজেট অনুমোদন, একই জেলার পঞ্চায়েত সমিতিগুলি রচিত পরিকল্পনাগুলির মধ্যে সমন্বয়সাধন, এলাকার ও তাদের কাজকর্ম তদারক করাও জেলা পরিষদের অন্যতম কাজ বলে বিবেচিত হয়।

জেলা পরিষদের অন্যান্য কাজগুলির মধ্যে প্রধান হল জল সরবরাহ, সেচ, জনস্বাস্থ্য, হাসপাতাল, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা, কৃষি, পশুপালন, শিল্প, সমবায় আন্দোলন, গ্রামীণ ঋণব্যবস্থা প্রভৃতি খাতে পরিকল্পনা ও অর্থসংস্থান এবং গ্রামীণ হাট-বাজারের রক্ষণাবেক্ষণ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতকে অনুদান প্রদান, প্রকৌশলগত শিক্ষাপ্রসারে বৃত্তিপ্রদান, ত্রাণ, জল সরবরাহ ও মহামারী প্রতিরোধে অর্থবরাদ্দ করা। এগুলি ছাড়া সরকার প্রদত্ত কাজ ও পরিকল্পনার দায়িত্বও জেলা পরিষদগুলিকে পালন করতে হয়।

এই সব কাজকর্ম ছাড়াও কিছু সমন্বয় ও পর্যবেক্ষণমূলক কাজও জেলা পরিষদকে করতে হয়। এর মধ্যে আছে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি কর্তৃক গৃহীত বা পরিকল্পিত প্রকল্পগুলির সমন্বয়সাধন, পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বাজেট পরীক্ষা ও অনুমোদন। এছাড়াও ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের উন্নয়নমূলক কার্যাবলি সম্পর্কে জেলা পরিষদ রাজ্য সরকারকে যথাযথ ও গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদানের অধিকারী।

এঁরা ছাড়াও প্রত্যেক জেলা পরিষদে একজন করে জেলা প্রযুক্তিবিদ বা ডিস্ট্রিক্ট ইঞ্জিনিয়ার, মেডিক্যাল অফিসার, উচ্চপদস্থ কারিগরি কর্মী এবং করণিক ও আরদালি থাকেন। রাজ্য সরকারও কিছু কর্মচারীকে পরিষদে ন্যস্ত করে থাকেন।

 

No comments:

Post a Comment

Please do not enter any Link in the comment box.

Featured Post

ugb semester 2 exam form fill up and malda women's college payment

 UGB SEMESTER 2 EXAM FORM FILL UP 2022 UGB 2ND SEMESTER STUDENT LOGIN PAGE Malda Women's College STUDENT PORTAL সম্পূর্ণ ভিডিও দেখে সহজে...