শিক্ষার
সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্য
শিক্ষার
লক্ষ্য এক নয়, বহু
যুগে যুগে বসু দার্শনিক এবং শিক্ষাবিদ শিক্ষার প্রকৃত লক্ষ্য নির্ধারণ করতে গিয়ে
ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী এবং সমাজতন্ত্রবাদী—এই দুই গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছেন। যেসব শিক্ষাবিদ শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে সামাজিক
দিকের প্রতি বেশি পুরুত্ব দিয়েছেন তাদের বলা হয় সমাজতন্ত্রবাদী। তারা মনে করেন
সমাজের বাইরে ব্যক্তির পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের
বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
সমাজকে বাদ
দিয়ে ব্যক্তির পৃথক কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই সমাজের লক্ষ্য এবং ব্যক্তির লক্ষ্য এক
হবে।
সমাজের কল্যাণ
হলেই ব্যক্তির কল্যাণ হবে।
সমাজই
ব্যক্তিকে নিরাপত্তা দিতে পারে।
সামাজিক
চাহিদা এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করাই হবে শিক্ষার কাজ।
শিক্ষার
সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের সুবিধা
সমাজজীবন
ব্যক্তিকে সবধরনের নিরাপত্তার আশ্বাস দেয় এবং তার সামনে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দুয়ার
খুলে দেয়।
সমাজ পরিবেশই
বংশানুক্রমে অর্জিত অতীতের সুন্দর ও সফল অভিজ্ঞতাগুলি ব্যক্তির সামনে অনুশীলনের
জন্য তুলে ধরে।
সামাজিক
রীতিনীতি এবং অনুশাসনগুলি ব্যক্তির আচরণ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজের
কল্যাণসাধন করে।
সমাজের সভ্য
হিসেবে প্রতিটি ব্যক্তি সমাজের যাবতীয় সুযােগসুবিধা ভােগ করে। শুধু তাই নয়, এই সুযোগসুবিধাকে ব্যক্তি তার আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিতৃপ্তির কাজে ব্যবহার করে।
সমাজ দুর্বল
এবং সবল সব ধরনের ব্যক্তিকেই আশ্রয় দেয় এবং সবারই মঙ্গলকামনা করে।
এমন কতকগুলি দায়িত্ব
থাকে যা এককভাবে কোনও ব্যক্তির পক্ষেই সম্পাদন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সমাজ বা
রাষ্ট্র ওই কাজের দায়িত্ব নেয়। ফলে সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যই বলবৎ হয়।
শিক্ষার
সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যের ত্রূটি বা অসুবিধা
সমাজতান্ত্রিক
লক্ষ্যের অনেক ত্রুটি আছে। নীচে এগুলির সংক্ষেপে আলোচনা করা হল—
শিক্ষার
সমাজতান্ত্রিক লক্ষ্যে সমাজের চাহিদা,
আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ওপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যক্তির
সামর্থ্য, চাহিদা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা অবহেলিত হয়। এর ফলে বাস্তবে যেমন ব্যক্তির কল্যাণ হয় না, তেমনি সমাজেরও কল্যাণ সাধিত হয় না। কারণ ব্যক্তিদের নিয়েই সমাজ গঠিত
হয়।
শিক্ষার
লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিক মতবাদের প্রাধান্য রাষ্ট্রপ্রধানদের স্বেচ্ছাচারিতা
করার সুযোগ করে দেয়, গণতন্ত্র অবহেলিত হয়। এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক, ছাত্র-সকলের মধ্যেই স্বেচ্ছাচারিতার মানসিকতা তৈরি হয়।
শিক্ষার
লক্ষ্য হিসেবে সমাজতান্ত্রিকতার ওপর অধিক পুরুত্ব দেওয়ায় ব্যক্তিস্বাধীনতা
ক্ষুন্ন হয়। ব্যক্তির সৃজনশীলতা বিকাশের পথে বাধার সৃষ্টি হয়।
পুরোপুরি সমাজতান্ত্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যক্তির আত্মবিকাশের পথ রুদ্ধ হয়,
ফলে ব্যক্তির মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হয়। সমস্ত মানুষের মধ্যের
পুঞ্জীভূত এই ক্ষোভ পরে বিদ্রোহের আকার ধারণ করতে পারে।
ওপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার সমাজতান্ত্রিক
লক্ষ্যে ব্যক্তি অপেক্ষা সমাজকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং ব্যক্তির ওপর সমাজ ও
রাষ্ট্রের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে তা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি এবং সমাজ
উভয়ের ক্ষতি করে। তাই আধুনিক শিক্ষার লক্ষ্য স্থির করার সময় ব্যক্তি ও সমাজের
মধ্যে সমন্বয়ের কথা বিবেচনা করতে হবে।
No comments:
Post a Comment
Please do not enter any Link in the comment box.